আন্তর্জাতিক

ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারে 'সক্ষম' কিয়েভ

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গত ৯ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেনীয় সেনাদের নৈপুণ্য ও দৃঢ়তা বিশ্ববাসীকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে বলে মনে করেন মার্কিন প্রশাসন ও সামরিক কর্মকর্তারা। সে হিসেবে ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে দখল করে নেওয়া উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার হাত থেকে পুনরুদ্ধারেরও সক্ষমতা কিয়েভের রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। তবে, যুদ্ধের এ পর্যায়ে ক্রিমিয়ায় বড় কোনো হামলা কিংবা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন বলেও আশঙ্কা তাঁদের। খবর এনবিসির। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। মার্কিন সরকারের এক কর্মকর্তাকে একটি ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ইউক্রেন ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে কিনা। তিনি জবাবে বলেছিলেন, অঞ্চলটি ফিরিয়ে নিতে সক্ষমতা রয়েছে ইউক্রেনের। এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, শিগগির ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধরের কোনো পরিকল্পনা নেই ইউক্রেনের এবং সেখানে হামলাও চালাবে না দেশটি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ়তা ও ভালো দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বলে স্বীকার করেন ওই কর্মকর্তা। গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের বাহিনী সম্পর্কে মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। হামলার মাত্র কয়েক দিন কিংবা সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রুশ সেনা ও ট্যাংক বহর ধ্বংস করে দেবে- এমনটাই তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁরাই এখন বলেছেন, ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি, উন্নত-সমৃদ্ধ সশস্ত্র সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দক্ষতা ও নৈপুণ্য দেখিয়েছে। একজন সাবেক ও বর্তমান দুই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, ক্রিমিয়ায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ডার্টি বোমা বা অন্য পারমাণবিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। অপর সাবেক কর্মকর্তা বলেছেন, এটিই রেড লাইন। অবশ্য তিন মার্কিন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া এই মুহূর্তে পারমাণবিক অস্ত্র বা ডার্টি বোমা ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে কোনো লক্ষণ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিমিয়া নিয়ে সত্যি সত্যিই লড়াই হলে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। রাশিয়া বড় ধরনের সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে লড়াই করবে, যা ইউক্রেনীয় বাহিনীর মোকাবিলা করা ও অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া কঠিন হবে। এদিকে, নিজ সামরিক বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুতিন। গত শুক্রবার ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলার দিনই এই বৈঠক করেন তিনি। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে সেখানেই বসেন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে।বৈঠকের ভিডিওতে দেখা যায়, পুতিনের পাশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভালেরি গেরাসিমভ। এ সময় তাঁদের উদ্দেশে পুতিন বলেন, 'আমরা প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রের অধিনায়কদের দিকনির্দেশনা শুনব। আমি তাৎক্ষণিক ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের বিষয়ে আপনাদের প্রস্তাব শুনতে চাই।' ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে রাজধানী কিয়েভে ফের হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এদিকে, ব্যাপক হামলায় বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। এরই মধ্যে ৬০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে এখনও অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন। ফলে সেসব এলাকার মানুষ ঘর গরম করতে না পারায় শীতে কষ্ট পাচ্ছে। সংকট রয়েছে পানির। নিজ সেনাদের মনোবল চাঙ্গা করতে ফ্রন্ট লাইনে সংগীতশিল্পী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পুতিনের নিয়োগ দেওয়া সেনাদের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় সামরিক চাকরিতে যোগ দেওয়া পেশাদার শিল্পীদেরও যুদ্ধের সামনের সারিতে রাখা হবে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস