আন্তর্জাতিক

বিদ্রোহী গ্রুপ ও আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধেসিরীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি সামান্যই

রাশিয়ার নিবিড়
বিমান সমর্থন এবং ইরান ও হেজবুল্লাহ
যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও
যুদ্ধক্লান্ত সিরিয়ার সেনাবাহিনী
সরকার বিরোধী বিদ্রোহী গ্রুপগুলো ও
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে
লড়াইয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভে
হিমশিম খাচ্ছে। খবর এএফপি। ৩০
সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন
সপ্তাহের রুশ বিমান হামলা বাশার
সরকার ও তাদের সেনাবাহিনীর মনোবল
জোরদার করলেও বিশ্লেষকদের মতে
এখন পর্যন্ত স্থল লড়াইয়ে তাদের সাফল্য
সামান্যই। দামেস্কে সামরিক সূত্রে বলা
হয়, সরকারী বাহিনীর সাফল্য অর্জনে
সময় লাগবে। সূত্রে পরিস্থিতির
পরিবর্তনের ব্যাপারে আস্থা ব্যক্ত করা
হয়। উল্লেখ্য, রুশ জঙ্গি বিমান এ পর্যন্ত
৫শ’বারেরও বেশি হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের শিয়া হেজবুল্লাহ যোদ্ধা ও
ইরানের এলিট আল কুদস বাহিনীর
সমর্থনে সিরীয় সেনাবাহিনী দু’সপ্তাহ
আগে উত্তরে আলেপ্পো, মধ্যাঞ্চলে
হোমস ও হামা, উপকূল বরাবর লাটাকিয়া
ও দামেস্কের বাইরে স্থল অভিযান শুরু
করে। তারা আলেপ্পো, হোমস ও হামায়
কয়েকটি গ্রাম দখলের মাধ্যমে কিঞ্চিৎ
সাফল্য লাভ করে। কিন্তু তারা কোনো
গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা সরবরাহ পথ দখল করতে
পারেনি। অন্যদিকে শনিবার ২ হাজার
ইরানি ও ইরান সমর্থিত যোদ্ধা বাহিনী
নিয়ে আলেপ্পোর দিকে তারা যে
অভিযান শুরু করে তার গতি মন্থর হয়ে
এসেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কার্নেগি মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রের ইয়াজিদ
সায়িগ বলেন, সিরীয় সেনাবাহিনীর
মধ্যে নানাবিধ দুর্বলতার কারণে
রাশিয়ার নিবিড় বিমান ছত্রছায়া
সত্ত্বেও যুদ্ধের ভারসাম্য সিরিয়ার
সরকারী বাহিনীর পক্ষে আসছে না।
উল্লেখ্য, মৃত্যু, স্বপক্ষত্যাগ ও নতুন সৈন্য
নিয়োগ হ্রাসের কারণে গৃহযুদ্ধ
পূর্বকালের ৩ লাখ সদস্যের সিরীয়
সরকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা
বর্তমানে অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া তারা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের
সংকটে ভুগছে। ব্রিটেন ভিত্তিক
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান
রাইটস-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান মতে,
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে
সরকারী বাহিনীর ৫২ হাজার সৈন্য নিহত
হয়েছে।পূর্বে সিরিয়ায় ছিলেন এমন
একজন আঞ্চলিক সামরিক বিশেষজ্ঞ
বলেন, সিরীয় বিমান বাহিনীর বোমা ও
ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার সরবরাহকৃত।
স্থানীয়ভাবে তারা পায় শুধু ব্যারেল
বোমা।সায়িগ বলেন, এ মুহূর্তে রাশিয়ার
হস্তক্ষেপ নিশ্চিতই সিরীয়
সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি করলেও তা
খুব বেশি কিছু নয়। প্যারিসভিত্তিক
ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড
স্ট্র্যাটেজিক ইন্সটিটিউটের করিম
বিতার বলেন, রাশিয়ার হস্তক্ষেপকে খুব
উল্লাসের সাথে গ্রহণ করা হলেও
বাস্তবে তাতে পরিবর্তন ঘটেছে খুব
সামান্যই। সামরিকভাবে তারা
স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করছে
এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে আসাদের
নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার উপর যাতে দৃঢ়
নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকে তা নিশ্চিত করা।
এ পর্যায়ে তারা স্থল বাহিনী দিয়ে
হস্তক্ষেপ জোরদার করে হারানো
এলাকা পুনর্দখল করতে অথবা অধিকতর
প্রচ- বিমান হামলা চালাতে আগ্রহী নয়।
সায়িগ বলেন, আল নুসরাসহ সরকার
বিরোধী শক্তিশালী গ্রুপগুলোর জোটের
প্রচ- হামলার সম্মুখীন হয়েছে
লাটাকিয়া। বিদ্রোহীরা কৌশলগত
গুরুত্বপূর্ণ সাহল আল গালিব সমভূমির দিক
অগ্রসর হয়ে হামা, লাটাকিয়া ও ইদলিব
প্রদেশের আন্তঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে
দিতে চাইছে। কিন্তু দামেস্কের জন্য
লাটাকিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লাটাকিয়াকে নিরাপদ রাখা মানে
সাহল আল গালিব ও নিকটস্থ সরবরাহ পথ
নিশ্চিত করা যা উপকূলের সাথে
রাজধানীকে সংযুক্ত করেছে।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দি
স্টাডি অব ওয়ার –এর ক্রিস কোজাক
সাম্প্রতিক যুদ্ধের এক বিশ্লেষণে
লেখেন, বিদ্রোহীদের প্রচ- প্রতিরোধের
কারণে সরকারী বাহিনী জনশক্তি ও
সরঞ্জামের ক্ষেত্রে বিপুল ক্ষতির
শিকার হয়েছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে
বড় মাপের স্থল অভিযান শুরু করে
রাশিয়ার বিমান সমর্থন ও ইরানি
যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ সত্ত্বেও সরকারী
বাহিনী প্রথম সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য
এলাকা দখল করতে পারেনি।তিনি বলেন,
সরকারী বাহিনীর এ অভিযান উল্টো ফল
দিতে পারে। সরকারী বাহিনীর বহু সৈন্য
নিহত হওয়ায় তারা বিদ্রোহীদের পাল্টা
হামলার মুখে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র
জানায়, সরকারী বাহিনী ও তাদের
মিত্ররা একটি প্রলম্বিত যুদ্ধের জন্য
তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, হোমসে
কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভের
জন্য তাদের তিনমাস সময় লাগবে।
এদিকে রয়টারস জানায়, তুরস্ক গত
শুক্রবার তার ভূখন্ডে ভূপাতিত করা
ড্রোনটি রাশিয়ার বলে জানিয়েছে।
তবে রাশিয়া ড্রোনটি তাদের নয় বলে
আংকারাকে জানিয়েছে। তুর্কি
প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু সোমবার
তুর্কি টিভি এ হাবারকে বলেন, ভূপাতিত
ড্রোনটি রাশিয়ার তৈরি, কিন্তু রাশিয়া
বন্ধু সুলভ ভাবে আমাদের বলেছে যে এটা
তাদের নয়। তিনি বলেন, আমরা রাশিয়ার
বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশীত্বকে মূল্য দেই।
আমরা আশা করি যে তারা আরো
সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং রুশ-তুর্কি
সম্পর্কের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব
পড়বে না।