উদ্বোধনী দিনে বিশ্বনেতাদের ভারী ভারী সব বক্তব্যের সূত্র ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকটা গরম ভাব দেখা যায় প্যারিসের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের হলগুলোয়। একের পর এক বৈঠক, প্রেস কনফারেন্সসহ ভেন্যুর ভেতরকার পথে পথে চায়ের টেবিলের আড্ডাগুলোয় চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। পর্যবেক্ষকদের কৌতূহল আর তিন হাজারের বেশি মিডিয়াকর্মী ছুটেছেন এক হল থেকে আরেক হলে। প্রায় পায়ে পায়ে চলে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের ইন্টারভিউ। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর শত শত ক্যামেরা ঘুরে বেড়ায় একজন থেকে আরেকজনে। সবারই প্রায় একই প্রশ্ন-প্রথম দিনের বক্তব্যে কী এমন আশার আলো দেখা গেল? তবে উত্তরগুলো অতটা আশা জাগাতে পারেনি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শ্রুতিমধুর বক্তব্য তাৎক্ষণিক বেশ আকর্ষণীয় মনে হলেও কাল যেন এর সারমর্ম অনেকটা ফিকে হয়ে আসে। তাঁর বক্তব্যে কার্যকরভাবে আশাবাদী হতে পারছেন না জলবায়ুবিষয়ক বিশ্লেষকরা। বরং বেশির ভাগ আলোচনায় কান পেতে হতাশার পাল্লাই ভারী মনে হলো।
এর সঙ্গে গতকাল যুক্ত হয় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা, কৃষি, খাদ্য, অর্থনীতির পথে অগ্রগতির বিষয়গুলো। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
জার্মানির পরিবেশকর্মী সিমো কুশিউ কালের কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে রীতিমতো হেসে ফেললেন। বললেন, ‘উনি (বারাক ওবামা) সবার উদ্দেশে বেশ ভালো ভালো সবক দিয়েছেন। কিন্তু নিজে সারা বিশ্বের জন্য কী করবেন, যাঁরা তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাঁদের জন্য তিনি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন এর সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু বলেননি।’
অন্যদিকে এমন হতাশার চিত্রই ছিল সম্মেলনকেন্দ্রের মিডিয়া এরিয়ায় তিন নম্বর প্রেস কনফারেন্স রুমে। সেখানে জাতিসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের ড. সালিমুল হককে ঘিরে মেতেছিলেন বিশ্ব মিডিয়ার অনেকে। তাঁর কাছ থেকেই মিডিয়াকর্মীরা জানতে চান ওবামার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া। তিনি এ বিষয়ে বেশি কিছু না বলে কেবল জানান, নতুন কিছু দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে তাঁর কাছে মনে হয়নি। বরং হতাশাই বেশি।
ওবামার তুলনায় বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন কিংবা জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল অথবা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের বক্তব্য অনেকটা এগিয়ে রাখতে চাইলেন অনেকে। আর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কথাগুলোই যেন হয়ে উঠল সমবেত সবার কথা।
প্রতিটি সাইড ইভেন্টে বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ দেশের স্বার্থ নিয়েই সুযোগমতো কণ্ঠ ছাড়েন। তবে ঘুরে ফিরে আসে সেই একই দাবির সুর। সবাই চান এবার যেন বহু প্রত্যাশিত কার্বন নিঃসরণে আইনগত বাধ্যবাধকতার মূল্যবান চুক্তিটি আসে। দায়ী দেশগুলোর প্রতি যেন সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দরকষাকষি শুরু হয়ে গেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক তেমন আভাস দেন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য অতিরিক্ত সচিব মঞ্জুরুল হান্নান বলেন, বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত মানুষদের নিরাপদ বসবাসের দিকে নজর দেওয়ার জন্য বেশি গুরুত্ব দেবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার বিষয়গুলো তো থাকছেই। বাংলাদেশ থেকে আসা জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে বেশ সোচ্চার অবস্থানের কারণে এখন বাংলাদেশ বিশ্ব জলবায়ু অঙ্গনে আর অপরিচিত নয়। বরং শীর্ষ পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এখন আর কোথাও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর আলোচনা সম্ভব নয়। তাই এবার আমাদের আরো বেশি সক্রিয় থাকা উচিত আইনগত বাধ্যবাধকতার চুক্তির ক্ষেত্রে দরকষাকষিতে।’
গতকাল সম্মেলনে আরেকটি বড় আলোচনার বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকির তালিকায় থাকা দেশগুলোর সংখ্যা নিয়ে। প্রতিবারই এমন দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি হবে বলে গতকাল খবর ছড়ায় মিডিয়া জোনে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এখন খুব কম দেশই জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকির তালিকার বাইরে থাকছে। বরং উন্নয়নশীল দেশের তালিকার অনেকেই যুক্ত হয়েছে এখানে। এর কারণ হিসেবে অবশ্য যুক্তি তুলে ধরে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু তহবিলে ভাগ বসানো বা এখান থেকে সাহায্য আদায়ে লোভ থেকেই এমনটা হতে পারে।
গতকাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসই নয় কিংবা উদ্বাস্তু সমস্যাই নয়, এর বাইরে স্বাস্থ্য, কৃষি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে কয়েকটি আলাদা আলোচনা সভা হয় ভিন্ন ভিন্ন হলে। এবার সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বায়ুদূষণকবলিত মানুষের দিকে নজর দেওয়া হয়। বলা হয়, বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই বায়ুদূষণ থেকে বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে জলবায়ু সম্মেলন থেকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া প্রথম দিন বিশ্বের বড় বড় সব নেতার মুখ থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করার ব্যাপারে যে জোরালো বক্তব্য এসেছে গতকাল সেই ধারা বজায় রেখেই সাইড মিটিংগুলোয় আলোচনা করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ও খাদ্যতে যে ঝুঁকি বিদ্যমান রয়েছে তা মোকাবিলায় আরো আশাবাদী হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এর সঙ্গে গতকাল যুক্ত হয় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা, কৃষি, খাদ্য, অর্থনীতির পথে অগ্রগতির বিষয়গুলো। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুকে সঠিকভাবে উপস্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
জার্মানির পরিবেশকর্মী সিমো কুশিউ কালের কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে রীতিমতো হেসে ফেললেন। বললেন, ‘উনি (বারাক ওবামা) সবার উদ্দেশে বেশ ভালো ভালো সবক দিয়েছেন। কিন্তু নিজে সারা বিশ্বের জন্য কী করবেন, যাঁরা তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাঁদের জন্য তিনি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন এর সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু বলেননি।’
অন্যদিকে এমন হতাশার চিত্রই ছিল সম্মেলনকেন্দ্রের মিডিয়া এরিয়ায় তিন নম্বর প্রেস কনফারেন্স রুমে। সেখানে জাতিসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের ড. সালিমুল হককে ঘিরে মেতেছিলেন বিশ্ব মিডিয়ার অনেকে। তাঁর কাছ থেকেই মিডিয়াকর্মীরা জানতে চান ওবামার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া। তিনি এ বিষয়ে বেশি কিছু না বলে কেবল জানান, নতুন কিছু দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে তাঁর কাছে মনে হয়নি। বরং হতাশাই বেশি।
ওবামার তুলনায় বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন কিংবা জার্মানির চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল অথবা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের বক্তব্য অনেকটা এগিয়ে রাখতে চাইলেন অনেকে। আর জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কথাগুলোই যেন হয়ে উঠল সমবেত সবার কথা।
প্রতিটি সাইড ইভেন্টে বিভিন্ন দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ দেশের স্বার্থ নিয়েই সুযোগমতো কণ্ঠ ছাড়েন। তবে ঘুরে ফিরে আসে সেই একই দাবির সুর। সবাই চান এবার যেন বহু প্রত্যাশিত কার্বন নিঃসরণে আইনগত বাধ্যবাধকতার মূল্যবান চুক্তিটি আসে। দায়ী দেশগুলোর প্রতি যেন সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দরকষাকষি শুরু হয়ে গেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক তেমন আভাস দেন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য অতিরিক্ত সচিব মঞ্জুরুল হান্নান বলেন, বাংলাদেশ এবারের সম্মেলনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত মানুষদের নিরাপদ বসবাসের দিকে নজর দেওয়ার জন্য বেশি গুরুত্ব দেবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে আটকে রাখার বিষয়গুলো তো থাকছেই। বাংলাদেশ থেকে আসা জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বেসরকারি পর্যায়ের সংগঠক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে বেশ সোচ্চার অবস্থানের কারণে এখন বাংলাদেশ বিশ্ব জলবায়ু অঙ্গনে আর অপরিচিত নয়। বরং শীর্ষ পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে এখন আর কোথাও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর আলোচনা সম্ভব নয়। তাই এবার আমাদের আরো বেশি সক্রিয় থাকা উচিত আইনগত বাধ্যবাধকতার চুক্তির ক্ষেত্রে দরকষাকষিতে।’
গতকাল সম্মেলনে আরেকটি বড় আলোচনার বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকির তালিকায় থাকা দেশগুলোর সংখ্যা নিয়ে। প্রতিবারই এমন দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি হবে বলে গতকাল খবর ছড়ায় মিডিয়া জোনে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে এখন খুব কম দেশই জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকির তালিকার বাইরে থাকছে। বরং উন্নয়নশীল দেশের তালিকার অনেকেই যুক্ত হয়েছে এখানে। এর কারণ হিসেবে অবশ্য যুক্তি তুলে ধরে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জলবায়ু তহবিলে ভাগ বসানো বা এখান থেকে সাহায্য আদায়ে লোভ থেকেই এমনটা হতে পারে।
গতকাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসই নয় কিংবা উদ্বাস্তু সমস্যাই নয়, এর বাইরে স্বাস্থ্য, কৃষি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে কয়েকটি আলাদা আলোচনা সভা হয় ভিন্ন ভিন্ন হলে। এবার সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বায়ুদূষণকবলিত মানুষের দিকে নজর দেওয়া হয়। বলা হয়, বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই বায়ুদূষণ থেকে বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে জলবায়ু সম্মেলন থেকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া প্রথম দিন বিশ্বের বড় বড় সব নেতার মুখ থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে টেকসই করার ব্যাপারে যে জোরালো বক্তব্য এসেছে গতকাল সেই ধারা বজায় রেখেই সাইড মিটিংগুলোয় আলোচনা করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ও খাদ্যতে যে ঝুঁকি বিদ্যমান রয়েছে তা মোকাবিলায় আরো আশাবাদী হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।