আন্তর্জাতিক

অনুদান বাড়াচ্ছে না সুইডেন

আগামী পাঁচ বছরে অনুদানের পরিমাণ বাড়াচ্ছে না সুইডেন। গত পাঁচ বছরের সমানই অনুদান দিচ্ছে দেশটি। অন্যদিকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রায় ১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে সুইডেন। দেশটি এ দেশের প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশসহ কয়েকটি খাতে এ অনুদান সহায়তা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও সুইডেনের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে মঙ্গলবার।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় অনুষ্ঠানে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহার ফ্রাইসেল। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অধিক পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ এবং অনুদান প্রয়োজন। বর্তমানে অনুদানের পরিমাণ দিন দিন কমছে, কিন্তু তারপরও অনুদান যত পাওয়া যাবে ততই ভালো। এটি আমাদের জন্য দরকার। তবে সাধারণত যেসব দেশ অনুদান দেয় তারা কারিগরি সহায়তার ক্ষেত্রে অনুদান দিয়ে থাকে। কেননা অনেক বিষয়ে আমাদের প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকে না।

তিনি জানান, অনুদানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে দেশ বা সংস্থা অনুদান দেয়, তারা সাধারণ পরামর্শকও দিয়ে থাকে। এটিও খারাপ কিছু নয়। আমাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সুইডেন ডেস্কের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে অনুদান সহায়তা বাড়াচ্ছে না সুইডেন। তবে এখন পর্যন্ত দেশটি চূড়ান্তভাবে কোনো টাকার অঙ্ক জানায়নি। এ ক্ষেত্রে যে অনুদান সহায়তা দিচ্ছে তা পরবর্তীতে কমে বা বেড়ে যেতে পারে। এটা নির্ভর করবে প্রকল্পের ব্যয়ের ওপর। এটি হবে একটি আমব্রেলা চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় পরবর্তীতে প্রকল্পভিত্তিক অনুদান সহায়তা দেবে সুইডেন। তবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত যে, সুইডেন অতীতের মতোই এক দশমিক ৬ বিলিয়ন এইইকে (সুইডিস কোনাল) বা এক হাজার ৪০৮ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এগ্রিমেন্ট বিটুইন সুইডেন অ্যান্ড বাংলাদেশ অন ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন শীর্ষক এ চুক্তিটি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও পরবর্তীতে জানানো হয় সে দেশের ক্যাবিনেটে অনুমোদন না হওয়ায় কিছুটা দেরি হবে। পরবর্তীতে তারা তারিখ জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সুইডেন বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী। তারা অনুদান দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। গত পাঁচ বছর ধরে প্রত্যেক বছর ২৮০ কোটি টাকা (২৩৫ মিলিয়ন এসিকে) অনুদান সহায়তা দিয়ে আসছে সুইডেন। মাল্টি ডোনার ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে সুইডেন দেশের প্রাথমিক শিক্ষা, কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, পরিবেশসহ কয়েকটি খাতে এ অনুদান সহায়তা দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে দাতাদের অনুদানের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুইডেনে বড় অঙ্কের অনুদান একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরগুলোতে বৈদেশিক সহায়তা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। গত বছরের ১৫ ও ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক (বিডিএফ) বৈঠকে ব্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরকারের সঙ্গে উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিডিএফ বৈঠকের বিভিন্ন আলোচনায় কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অবকাঠামো, সুশাসন, স্বাস্থ্য, মানসম্মত শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা এবং উন্নয়নের মূল ধারায় জেন্ডার সমতা আনয়ন ইত্যাদি খাতে সুনির্দিষ্ট মতামত ও যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। সেই সাথে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ এবং টেকসই উন্নয়নে সরকার ও উন্নয়নসহযোগী সংস্থাসমূহের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরির অঙ্গীকার করা হয়েছে।