আন্তর্জাতিক

সাহিত্যিক ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্ম ভিটা

বিশ্ব বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্ম ভিটা। ইংল্যান্ডের আ্যাভন নদীর দুই পাশে স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-আ্যাভনে গিয়ে মনে হলো, ঠিক কোন বিষয়টি শেক্সপিয়ারকে এতো কালজয়ী সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলো? তার জন্মস্থানের আশপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বন-বনানী, যেনো চির শান্তির হাতছানি। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে যে কারো মনে সাহিত্য বোধের উদয় হবে। 
যাই হোক, ব্রিটেনে কর্মরত বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের বৃহৎ সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের আয়োজনে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বাড়িতে গিয়েছিলাম সামার ট্রিপে। তিনটি কোচে করে শতাধিক যাত্রী নিয়ে প্রেসক্লাব সদস্যবৃন্দ এবং তাঁদের পরিবারবর্গ স্ট্র্যাটফোর্ড আ্যাপন-আ্যাভন শহরে আসেন লন্ডন থেকে। ব্রিটেনের অন্যান্য শহর থেকেও অনেক সাংবাদিক সপরিবারে নিজ নিজ গাড়ি নিয়ে দুই তিন ঘন্টা ড্রাইভ করে হাজির হন ইংরেজি সাহিত্যের তীর্থভুমে। লিডস থেকে প্রায় তিন ঘন্টা ড্রাইভ করে আমি উপস্থিত হই সপরিবারে। লন্ডনের কোচ যাত্রীরা জানালেন,  যাত্রাপথে গান, কবিতা, কৌতুক, ছড়া কিংবা গল্পে উৎসবে খুব আনন্দ ঘন সময় কাটিয়েছেন তারা। সাথে হালকা স্ন্যাক্স এর স্বাদও উপভোগ করেছেন। সামার ট্রিপে আগত প্রায় দেড় শতাধিক অতিথির জন্য খাবার আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছিলো বার্মিংহাম এর সাংবাদিক শহীদুর রহমান সোহেল এবং মারুফ আহমেদ এর উপর। বিকালে অতিথিদের তৃপ্তির ঢেকুর দেখে মনে হয়েছে, বার্মিংহাম এর সহকর্মীরা অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ ভালো ভাবে। পেটচর্চা শেষে অনেকে মেতে উঠেন বিভিন্ন রকমের ক্রীড়া উৎসবে। যেমন গ্রাম বাংলার হাডুডু, হাঁড়ি ভাঙ্গা, কাবাডি ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিলো পুরুষ বনাম মহিলা টিমের রশি টানাটানি। বলা বাহুল্য, সর্বশক্তি দিয়ে মহিলাদের এমন জোর টান, রশি ছিড়ে খান খান। তাই নির্দ্বিধায় টিম রমণী বিজয়ী! আর বাচ্চাদের জন্য ছিলো বিভিন্ন ধরনের দৌড় প্রতিযোগিতা। নিঃসন্দেহে চমতকার সময় কাটিয়েছে বাচ্চারা। সবার আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিলো যখন অংশ গ্রহনকারিদের প্রায় সবাইকেই পুরস্কৃত করা হলো। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের মেডেল পরিয়ে ও পুরষ্কার দিয়ে সবাইকে খুশি করলেন। সামার ট্রিপে নর্থ ইংল্যান্ড বাংলাদেশী টিভি রিপোর্টারস এসোসিয়েশন (নেবট্রা) সহ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক  সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত ছিলেন। খাওয়া দাওয়া ও খেলাধুলা শেষে পড়ন্ত বিকেলে  সপরিবারে সাংবাদিকরা ছুটলেন ইংরেজি সাহিত্যের মুকুটহীন সম্রাট উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের এর জন্ম ভিটা দেখতে। আহা। গিয়ে বুঝা গেলো কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ দর্শণার্থী ঢুকার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য খোলা থাকলেও সবাই কি ঢুকতেন ? জানি না। কারণ টিকিটের যে উচ্চ মূল্য! অনেকের মতে, ঢুকার চাইতে বাইরে ঘুরাঘুরি করে, ছবি-টবি তুলে, দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে চলে আসাই শ্রেয়। এবং সেটাই হলো। বাইরে থেকে যতোটুকু দেখা গেলো, তাতেই সবাই চমতকৃত।  প্রায় পাঁচশত বছরের পুরনো দোতলা কাঠের বাংলো। সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই মন্ত্রমুগ্ধ! মনে হয়েছে, যেনো চলে গেছি শত শত বছর আগের ইতিহাসে। কল্পনা করি, বাড়ির ভিতর থেকে হয়তো ভেসে আসবে শিশু শেক্সপিয়ারের কান্নার ধ্বনি। সহকর্মীদের কোলাহলে বাস্তবে ফিরি। আশপাশে ঘুরে ফিরে দেখি। শুধু শেক্সপিয়ারের বাড়ি না, বরং তার আশপাশের বাড়িঘর, দোকান-পাট গুলোও সংরক্ষিত আছে অত্যন্ত যত্নের সাথে। বাড়ির অদূরে ছোট নদী। ভাবি, শেক্সপিয়ার কি বিখ্যাত  নাটকগুলো লিখেছেন এই নদীর তীরে বসে? জানিনা। তবে দেখে ভালো লাগলো, পর্যটকরা ছোট বড়ো নৌকা করে  মত্ত আছেন আনন্দঘন নৌবিহারে। আর শিশুরা খেলা করছে সুবিস্তৃত সুদৃশ্য সাজানো পার্কে।  পাখিদের মতো করে অনেক উঁচুতে উঠে আশপাশটা দেখার সুযোগও আছে। তাই পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে টিকেট কেটে চড়ে বসলাম বিশাল আকারের  চরকিতে। অনেক উঁচুতে উঠে প্রাকৃতিক দৃশ্য স্বপ্নের মতো লাগলো। পরিশেষে মধুর এই স্মৃতি তৈরির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাতে জানাতে  বাড়ি ফিরলাম আনন্দ ভ্রমণ শেষে। মিডিয়া সহকর্মীদের সাথে আনন্দঘন দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস