লাইফ স্টাইল

মশাবাহিত যেসব রোগ!

পৃথিবীতে থাকা সাড়ে তিন হাজার মশার প্রজাতির মধ্যে ১০০টি প্রজাতি মানবদেহে রোগ ছড়ায়। অন্য কীটপতঙ্গের তুলনায় মশাবাহিত রোগেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে বেশি। বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময়ে মশাবাহিত নানা রোগ জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। সম্প্রতি ডেঙ্গু মহামারি স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু চারটি ধরণের মধ্যে ডেন-২ ধরনেই চলতি বছর বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তবে ডেঙ্গু বাদেও এই মৌসুমে কিছু মশাবাহিত রোগ হতে পারে। সেই সংক্রমণ রোগ সম্পর্কেই আজকের সচেতনতামূলক এই লেখা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দেশে মোট পাঁচ ধরনের মশাবাহিত রোগ ছড়ায়। বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পনার মাধ্যমে কিছু রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। যদিও মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রে সবাই ধরেই নেয় ডেঙ্গু। সবসময় তা নাও হতে পারে। আর এভাবে ভুল চিকিৎসাও অনেকে উৎসাহিত হয়ে করান। তাই মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে জানা জরুরি। ডেঙ্গু
সংকটের কথা বিবেচনায় প্রথমেই ডেঙ্গু কথা বলতে হয়। মূলত এডিস মশার দুটো প্রজাতি ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এডিস ইজিপ্টি ও অ্যালবোপিকটাস, মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়।

অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশাকে বুনো মশা বলা হয়। ঝোপঝাড়ে কিংবা গাছের পাতায় জমে থাকা পানিতে এরা বংশবিস্তার করে। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। জ্বরের ৪/৫ দিন পার হলে শরীরজুড়ে র‌্যাশ বা ঘামাচির মত লালচে দানা দেখা দেয়। সাথে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে। ডেঙ্গু গুরুতর হলে রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, চোখের কোনা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ডেঙ্গুর এখনও অনুমোদিত প্রতিষেধক পাওয়া যায় নি। আর ডেঙ্গুর ধরন অনুসারে এই রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকিও আলাদা হয়। লক্ষণ দেখা দিলেই তাই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্লাটিলেট বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। ফাইলেরিয়া
কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোগ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়ায়। ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়। এটি মহামারি আকার ধারণ না করলেও দেশের প্রায় ৩৪টি জেলায় নিয়মিত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা যায়। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া রোগও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মত। তবে মাথাব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, এবং র‌্যাশের সঙ্গে শরীরে হাড়ের জয়েন্ট বা সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা হয়। চিকুনগুনিয়া হলে অধিকাংশ সময় তিন থেকে চার দিনের মধ্যে জ্বর সেরে যায়। কিন্তু হাড়ের সংযোগস্থলগুলোতে হওয়া ব্যথা কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ভোগায়। ম্যালেরিয়া
একসময় ম্যালেরিয়া দেশের জন্য ভয়াবহ প্রকোপ ছিল। তবে সরকার এ বিষয়ে নির্ধারিত কর্মসূচি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে এই সংকট অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়। এই সাত প্রজাতির মধ্যে চারটি প্রজাতি ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক বাংলাদেশে। এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায় ম্যালেরিয়া রোগের উপস্থিতি রয়েছে। মূলত পার্বত্য ও সীমান্ত এলাকাতেই ম্যালেরিয়া বেশি দেখা যায়। এটি গ্রীষ্মকালে হয়। এখন ম্যালেরিয়া প্রকোপের ৯০ শতাংশের বেশি হয় দেশে তিন পার্বত্য জেলায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য আশাবাদী তারা ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া সমূলে নির্মূল করতে পারবে।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস