কোন এক শান্ত দুপুর। জানালার পাশে বসে একাকিত্বে ডুবে থাকা এক তরুণী হঠাৎ খেয়াল করেন, তার পোষা বিড়ালটি এসে কোলের ওপর উঠে গরগর শব্দ করছে। মুহূর্তেই যেন মনটা হালকা হয়ে যায়, চিন্তার ভার কমে আসে।
এমন দৃশ্য শুধু গল্পে নয়, বাস্তবেও ঘটে প্রতিদিন। বিড়ালপোষা মানুষের জীবনে শুধু আবেগের জায়গা দখল করে না, এটি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য এক ধরনের জীবন্ত থেরাপি।
আধুনিক গবেষণা বলছে, বিড়ালের উপস্থিতি আমাদের জীবনে প্রশান্তি আনে, একাকিত্ব দূর করে এবং শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৯ মিলিয়ন পরিবারে বিড়াল রয়েছে, যা এই প্রাণীর জনপ্রিয়তা ও উপকারিতার প্রমাণ।
মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও বিড়ালের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা একদিকে সঙ্গ দেয়, অন্যদিকে নিঃসঙ্গতা ও উদ্বেগ কমায়। বিড়ালের খুনসুটি, আচরণ এবং আচমকা মজার কাণ্ড আমাদের মুখে হাসি ফোটায়।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা যায়, বিড়ালপোষা মানুষ অন্যদের তুলনায় কম একাকিত্ব অনুভব করেন, বিড়ালের স্বভাব-চরিত্র শান্ত বা বন্ধুত্বপূর্ণ হলে মানুষ তাদের প্রতি আরও বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন।
শারীরিক দিকেও পিছিয়ে নেই এই প্রাণীটি। এক্ষেত্রেও রয়েছে উপকারিতা। বিড়ালের সঙ্গে সময় কাটালে ‘কর্টিসল হরমোনের’ মাত্রা কমে, যা দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের জন্য দায়ী। একই সঙ্গে হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। মাত্র ১০ মিনিট বিড়ালের সঙ্গে খেলা করলেই শরীরের ছন্দ ফিরে আসে এবং মন শান্ত হয়।
আরও একটি গবেষণায় ১২০ দম্পতি মানসিক চাপ মাপার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বিড়ালপোষা এই দম্পতিরা মানসিক চাপের পরিস্থিতিতেও তুলনামূলকভাবে স্থির থাকেন। তাদের হৃৎস্পন্দন ও রক্তচাপ ছিল নিয়ন্ত্রিত, এবং চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছিলেন তারা।
বিড়ালের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তাদের ‘গরগর’ শব্দ। এই শব্দের কম্পন ২৫ থেকে ১৫০ হার্টজের মধ্যে থাকে, যা বিশেষভাবে ২৫ থেকে ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে হাড় ও পেশি পুনর্গঠনে সহায়ক। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই কম্পন হাড়ের দ্রুত সেরে ওঠায় সাহায্য করতে পারে। অর্থাৎ, বিড়াল যখন গরগর করে, তখন তারা শুধু নিজেদের আরাম করছে না - আমাদের শরীরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিড়ালপোষা মানুষেরা সাধারণত বেশি কল্পনাপ্রবণ, কৌতূহলী ও সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। যদিও তারা অনেক সময় অন্তর্মুখীও হতে পারেন, সেটিও মানসিক ভারসাম্যের অংশ। বিড়াল একটি রুটিন তৈরি করে, যা মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। অনেক মালিক এখন তাদের বিড়ালকে বাইরে নিয়ে যান, যাতে প্রাণীটি নিরাপদে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে পারে এবং মালিকও মানসিক প্রশান্তি পান।
তাছাড়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, এমনকি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে বিড়াল।
সব মিলিয়ে, বিড়ালপোষা শুধু ভালোবাসা বা সঙ্গ নয় - এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারী অভ্যাস। তাই বিড়ালপ্রেমীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে সুখবর - আপনার পোষা বিড়াল আপনাকে শুধু ভালোবাসে না, আপনাকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস