লস এঞ্জেলেস

ক্যালিফোর্নিয়ায় সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইন: জানুন বৃত্তান্ত

সাউথ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার স্ট্রেইন B.1.351 ছড়িয়ে পড়িয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে- এই খবর অজানা নয়। তবে এই বিষয়টিই নতুন করে ভাবাচ্ছে রাজ্যটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। এর কারণ, সন্দেহ করা হচ্ছে  ফাইজার ও মডার্নার টিকা এই স্ট্রেইনটির বিরুদ্ধে কিছুটা কম কার্যকরী হবে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসাম জানান, ইতোমধ্যে রাজ্যটিতে দুইজন নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে। একজন সান্তা ক্লারা কাউন্টির বাসিন্দা, অপরজন আলমেডা কাউন্টির বাসিন্দা। এছাড়া দেশজুড়ে সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইনে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত নয়জন। আক্রান্ত নয়জন ম্যারিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও সাউথ ক্যারোলিনার বাসিন্দা। সাউথ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া স্ট্রেইনটি ব্রিটেনের শনাক্ত হওয়া স্ট্রেইনটির থেকে আলাদা। ব্রিটেনের স্ট্রেইনটি হচ্ছে B.1.1.7। এটি করোনার গতানুগতিক স্ট্রেইন থেকে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ দ্রুত ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এন্থনী ফাউসি জানান, ব্রিটেনের এই নতুন স্ট্রেইন এর বিরুদ্ধে মডার্না ও ফাইজারের টিকা সমানভাবে কার্যকরী।  তবে ব্রিটেনের এই স্ট্রেইনে আক্রান্ত রোগী যুক্তরাষ্ট্রে অহরহ বাড়ছে বলে জানান ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ এন্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ডিরেক্টর ড. রোচেলে ওয়ালেনস্কি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক মোট সংক্রমণের জন্য নতুন স্ট্রেইন ১ থেকে ৪  শতাংশ পর্যন্ত দায়ী। ইতোমধ্যে B.1.1.7 স্ট্রেইনে ৩৪টি রাজ্যের প্রায় ৯৩২ জন বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১৫৯ জন। লস এঞ্জেলেস, রিভারসাইড, সান বার্নার্ডিনো, সান মাতেও, ইয়লো কাউন্টি ও আলমেডা কাউন্টিতে এই রোগীরা শনাক্ত হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইন B.1.351। এর কারণ হলো, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনো নিশ্চিত নন এই স্ট্রেইনটির বিরুদ্ধে টিকা ঠিক কতোটা কার্যকরী হবে। চলুন জেনে নিই বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন সাউথ আফ্রিকার এই স্ট্রেইন বিষয়ে - সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কিছুটা কম কার্যকরী ফাইজার মডার্নার টিকা: সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. এন্থনী ফাউসি জানিয়েছেন, সাউথ আফ্রিকার এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে বাজারে প্রচলিত ফাইজার ও মডার্নার টিকা কিছুটা কম কার্যকরী। ফাউসি বলেন, 'নতুন এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ কম হয়। তবে এটি খুব বেশি আশঙ্কার বিষয় নয়। সাধারণত টিকা এই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। তবে সুরক্ষার ব্যাপারে কিছুটা তারতম্য হতে পারে'। তিনি বলেন, 'আশার বিষয় হচ্ছে সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইন যথেষ্ট সুরক্ষা দিচ্ছে। এতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা মারা যাওয়ার ঘটনা নেই'। তবে বিজ্ঞানীরা সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইন পরিপূর্ণ মোকাবেলা করতে টিকার বুস্টআপ আপডেট তৈরি করার চেষ্টা করছেন। সান্তা ক্লারা কাউন্টিতে সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইনে আক্রান্তদের বৃত্তান্ত: বুধবার সান্তা ক্লারা কাউন্টিতে নতুন এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের বিষয়ে গণমাধ্যমে তথ্য দিয়েছেন গভর্নর গেভিন নিউসাম। তিনি জানান, আক্রান্ত দুইজন কেউ কারো সংস্পর্শে আসেননি, তারা আলাদা স্থানে বাস করতেন। তবে সম্প্রতি তারা দুইজনই ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন। দুইজনকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সান্তা ক্লারা কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিরেক্টর ড. সারা কোডি জানান, 'সান্তা ক্লারা কাউন্টিতে শনাক্ত ব্যক্তি মধ্য-জানুয়ারিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে ভ্রমণ করেছেন। পরে তাকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। পরবর্তীতে তার উপসর্গ দেখা দিলে জানা যায় তিনি সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইনে আক্রান্ত'। তবে আলমেডা কাউন্টিতে আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে তেমন কোনো বৃত্তান্ত জানা না গেলেও আলমেডা কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিরেক্টর ড. নিকোলাস মস জানান, ওই ব্যক্তি এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। থাকতে হবে সতর্ক: সাউথ আফ্রিকার স্ট্রেইনের সাথে গতানুগতিক স্ট্রেইনের খুব বেশি পার্থক্য নেই কিংবা এখনো পার্থক্য সঠিকভাবে জানা যায়নি। তাই এই স্ট্রেইন কীভাবে ছড়াচ্ছে ও কতো হারে ছড়াচ্ছে, সেটি নিয়ে আরো গবেষণা চলছে। তাই সাউথ আফ্রিকার এই স্ট্রেইনের বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন করতে বলে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাই মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে বলে জানান তাঁরা। ইতোমধ্যে নতুন স্ট্রেইনের সংক্রমণের সতর্কতাস্বরুপ ভ্রমণের উপর কড়াকড়ি আরোপ করেছেন রাজ্য কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে এই স্ট্রেইনের সংক্রমণ বাড়তে পারে: আলমেডা কাউন্টির হেলথ ডিরেক্টর ড. মস জানান, আমাদের কাউন্টিতে এই স্ট্রেইন ছড়ানোর একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, 'সংক্রমণ বাড়ার একটি সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য টিকা নেওয়া ও সতর্কতা মেনে চলা জরুরি'। এলএবাংলাটাইমস/ওএম