লস এঞ্জেলেস

ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরের উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি: ক্রিসেন্ট সিটিতে সর্বোচ্চ ঝুঁকি

রাশিয়ার কাছে ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাম্বোল্ট ও ডেল নর্ট কাউন্টিতে সর্বোচ্চ মাত্রার ‘সুনামি ওয়ার্নিং’ দেওয়া হয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ক্রিসেন্ট সিটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থায় তিনটি স্তর রয়েছে—ওয়াচ, অ্যাডভাইজরি ও ওয়ার্নিং। এর মধ্যে ‘ওয়ার্নিং’ সর্বোচ্চ স্তর, যার অর্থ হলো উপকূলের লোকজনকে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। একই রকম সতর্কতা জারি হয়েছে পুরো হাওয়াই রাজ্যে এবং আলাস্কার পশ্চিমাঞ্চলীয় আলেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। ক্যালিফোর্নিয়ার বাকি উপকূলে এখনও ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি রয়েছে, যার অর্থ হলো সেখানে শক্তিশালী স্রোত ও বিপজ্জনক ঢেউ দেখা দিতে পারে। মানুষকে সমুদ্রসৈকত ও উপকূলীয় এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ক্রিসেন্ট সিটিতে সুনামি ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ১.৫ ফুট, মেনডোসিনো কাউন্টির অ্যারিনা কোভে ১.৬ ফুট, মন্টেরেতে ১.৪ ফুট। লস অ্যাঞ্জেলেসে ১ ফুটেরও কম ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঢেউ শক্তিশালী স্রোতের মাধ্যমে বন্যা ঘটাতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্রিসেন্ট সিটিতে সুনামি ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে ঢেউ ৫ ফুট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ২০১১ সালের সুনামিতে এখানকার বন্দরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং একজন প্রাণ হারান। ১৯৬৪ সালের সুনামিতে মারা যান ১১ জন। ক্রিসেন্ট সিটির সিটি ম্যানেজার এরিক উইয়ার বলেন, “এটা ১৯৬৪ সালের মতো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ হবে না, তবে সাগরে প্রচণ্ড স্রোত তৈরি হবে। আমরা সবাইকে সৈকত, নদীর মোহনা এবং নিচু এলাকা থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করছি।” সর্বোচ্চ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বুধবার ভোররাতে (৩:৩০টায়), যখন সুনামির ঢেউ উচ্চ জোয়ারের সঙ্গে একত্র হয়ে উপকূলীয় বন্যার কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতীয় আবহাওয়া দপ্তরের ইউরেকা অফিসের আবহাওয়াবিদ রায়ান আয়লওয়ার্ড। ক্রিসেন্ট সিটি হারবারের নৌকা সরিয়ে ফেলার এবং লাইটহাউস কোভ আরভি পার্কের বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরের ভিএফডব্লিউ হলে একটি অস্থায়ী নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সান লুইস অবিসপো কাউন্টির পোর্ট সান লুইসেও ২ থেকে ৩.৭ ফুট উঁচু ঢেউ আঘাত হানতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যান্য অংশে ১.৩ ফুটের নিচে ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কোন কোন এলাকা সুনামি ঝুঁকিপূর্ণ? শুধু উপকূল নয়, উপসাগর বা নদীপাড়ের অনেক ভেতরের এলাকাও সুনামির ঝুঁকিতে পড়ে। এই সতর্কতা আসে মঙ্গলবার দুপুরে, রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর। এই কম্পনের ফলে সাইবেরিয়া ও জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢেউ আছড়ে পড়ে। ভূমিকম্পটি রুশ সময় সকাল ৯:২৫টায় এবং প্যাসিফিক ডেট টাইম অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল ৪:২৫টায় আঘাত হানে। রাশিয়ার স্থানীয় সূত্র বলছে, কিছু মানুষ আহত হয়েছেন এবং সুনামিতে একটি কিন্ডারগার্টেন ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কামচাটকা উপদ্বীপ থেকে ৪০ মাইল দূরে। এটি টোকিও থেকে ১,৫০০ মাইল, আঙ্কোরেজ থেকে ১,৯০০ মাইল, হনলুলু থেকে ৩,১০০ মাইল, সান ফ্রান্সিসকো থেকে ৩,৭০০ মাইল এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৪,১০০ মাইল দূরে অবস্থিত। হাওয়াইয়ের পরিস্থিতি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার পর হাওয়াইয়ের মাউই ও ওহু দ্বীপে সর্বোচ্চ ৪ ফুট উঁচু সুনামি ঢেউ আঘাত হানে। রাজ্যপাল জোশ গ্রিন জানিয়েছেন, এখনো বড় কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে সতর্ক থাকা দরকার। তিনি বলেন, “প্রথম ঢেউ বড় না হলেও পরবর্তী ঢেউ ভয়াবহ হতে পারে।” সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, আর সাইরেন বেজে উঠলে মানুষ উঁচু জায়গার দিকে ছুটে চলেছে। ২০২৩ সালের ভয়াবহ দাবানলের স্মৃতি অনেকের মনে এখনো তাজা, যা এই সতর্কতাকে আরও আতঙ্কজনক করে তুলেছে। জাপানেও সতর্কতা জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের নেমুরো বন্দরে ১ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। জাপানের পূর্ব উপকূলেও ১০ ফুট পর্যন্ত ঢেউয়ের আশঙ্কায় লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লস এঞ্জেলেস ও আশপাশের পরিস্থিতি মঙ্গলবার মধ্যরাতে এলএ, নিউপোর্ট বিচ, ওশেনসাইড ও লা জোল্লাতে ঢেউ পৌঁছাতে পারে। শহরের মেয়র ক্যারেন ব্যাস সবাইকে beaches, harbors, marinas এবং পানির ধার থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং NotifyLA.org-এ সাইন আপ করে আপডেট পেতে বলেছেন। লং বিচের সৈকত মঙ্গলবার রাত ১০টায় বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বুধবার সকাল পর্যন্ত সতর্কতা জারি থাকবে। অ্যালামিটোস বে থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত পুরো এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেসব গৃহহীন মানুষ সৈকত বা নদীর পাড়ে থাকেন, তাদের দ্রুত সরে যেতে বলা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, মাত্র ৬ ইঞ্চি গভীর জোরালো পানি একজন প্রাপ্তবয়স্ককে ফেলে দিতে পারে এবং ২ ফুট গভীর পানি গাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। জাতীয় সুনামি ঝুঁকি প্রশমন কর্মসূচির মতে, “শক্তিশালী স্রোতে মানুষ ডুবে যেতে পারে, এবং সুনামি নৌকা ও বন্দর অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম