ক্যালিফোর্নিয়ার দীর্ঘ বিলম্বিত হাই-স্পিড রেল প্রকল্পটি অবশেষে ২০৩২ সালের মধ্যে সেন্ট্রাল ভ্যালিতে চালু হতে পারে। তবে সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া থেকে লস এঞ্জেলেস পর্যন্ত পুরো সংযোগ বাস্তবায়নে এখনো প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান পাওয়া যায়নি—শুক্রবার প্রকাশিত ক্যালিফোর্নিয়া হাই স্পিড রেল অথরিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অথরিটির হিসাব অনুযায়ী, সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে গিলরয় এবং লস এঞ্জেলেসের প্রায় ৩৭ মাইল উত্তরে পালমডেল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে প্রয়োজন হবে প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এ অংশটি চালু হতে পারে ২০৩৮ সালে।
অথরিটির প্রধান নির্বাহী ইয়ান চৌধুরী প্রতিবেদনে লিখেছেন—“চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে আধুনিক এক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিশাল সম্ভাবনা, যা ক্যালিফোর্নিয়ার উচ্চাভিলাষের প্রতিফলন ঘটাবে। আসুন, আমরা এটি বাস্তবায়ন করি।”
প্রকল্পটি সান ফ্রান্সিসকো থেকে লস এঞ্জেলেস পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মাইল দূরত্বে যাত্রী পরিবহন করবে। ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররা একটি গণভোটে প্রকল্পটির এক-তৃতীয়াংশ খরচ বহনের অনুমোদন দিয়েছিলেন। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালের মধ্যে চালুর কথা ছিল। অথচ এখন ব্যয় দাঁড়াতে পারে ১২৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। এ বিষয়ে হালনাগাদ ব্যয়ের হিসাব আগামী বছর প্রকাশ করবে অথরিটি।
সেন্ট্রাল ভ্যালিতে ইতিমধ্যে ১১৯ মাইলের নির্মাণকাজ চলছে। তবে বে এরিয়া ও লস এঞ্জেলেসের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পৌঁছাতে হলে এবং টেকসই অর্থায়নের ব্যবস্থা না হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত থেকে যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি ৩১ জন সম্ভাব্য বেসরকারি বিনিয়োগকারী এ প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
সেন্ট্রাল ভ্যালির মের্সেড থেকে বেকারসফিল্ড পর্যন্ত ১৭১ মাইল লম্বা অংশ নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বিভিন্ন সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এ খরচ আরও বেড়ে ৫১ বিলিয়ন ডলার হয়নি।
প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পেয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ অর্থ এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ভোটার অনুমোদিত বন্ড এবং রাজ্যের ক্যাপ-অ্যান্ড-ট্রেড প্রোগ্রাম থেকে। বাকিটা এসেছে ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৯ সালে প্রকল্প থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়, যা ফেরত পেতে কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ নেয়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে সেন্ট্রাল ভ্যালিতে ডজন খানেক অবকাঠামো যেমন ভায়াডাক্ট, আন্ডারপাস, ওভারপাস এবং ৭০ মাইল গাইডওয়ে নির্মিত হয়েছে।
প্রকল্পটিকে “ট্রেন টু নোহোয়ার” আখ্যা দিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং পরিবহন সচিব শন ডাফি কড়া সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন—“যে রেলপথের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখনো নেই এবং কোনোদিনও হবে না। এটি ছিল অতিরিক্ত খরচের, অতিরিক্ত নিয়মকানুনে জর্জরিত এবং কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।”
অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম রাজ্যের ক্যাপ-অ্যান্ড-ট্রেড প্রোগ্রাম ২০৪৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি চান এই প্রোগ্রাম থেকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার করে হাই-স্পিড রেল প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হোক। বর্তমানে এ প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩০ সালে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম