মধ্যপ্রাচ্য

জলপাই বাগানে গিরিখাদ

সবুজে ঘেরা জলপাই বাগান। এক রাতের ব্যবধানে দুই ভাগ হয়ে গেছে। বাগানের মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছে গভীর খাদ। লম্বায় ৯৮৪ ফুটের খাদের ভেতরটি দেখতে অনেকটা ধূসর রঙের গিরিখাদের মতো। কোথাও কোথাও এটি প্রায় ১৩০ ফুট গভীর। গত সপ্তাহের ভূমিকম্পে সিরিয়ার সীমান্ত লাগোয়া তুরস্কের আল্টিনোজু জেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের বিধ্বংসী শক্তির আরেকটি প্রমাণ এটি। খবর সিএনএনের। ভোররাতে হানা শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় শত শত অবকাঠামো ধসে পড়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল রাত পর্যন্ত তুরস্কে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩৬ হাজার ১৮৭ এবং সিরিয়ায় অন্তত ৫ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪১ হাজার ৯৮৭ জনে। যদিও অলৌকিকভাবে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে মিলছে প্রাণের সন্ধান। গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারীরা ১৭ বছর বয়সী একজন তরুণীসহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে। গিরিখাদ তৈরি হওয়া অঞ্চলটি ইউরোশিয়া ও আনাতোলিয়া প্লেটকে বিভক্ত করা উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্টের কাছাকাছি অবস্থিত। ওই এলাকায় বাস করা ইরফান আকসু নামের এক ব্যক্তি তুরস্কের বার্তা সংস্থা ডেমিওরেনকে বলেন, গত সপ্তাহে ভূমিকম্পটি শুরু হলে বিকট শব্দ হচ্ছিল। ঘুম থেকে জেগে উঠলে মনে হচ্ছিল আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। বৃহস্পতিবার তুরস্কের উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টার পর অ্যালেনা ওলমেজ নামের এক তরুণীকে উদ্ধার করে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছের শহর কাহরামানমারাস থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁকে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া কয়লা খনি শ্রমিক আলী আকদোগান এএফপিকে জানান, তিনি সুস্থ আছেন বলেই মনে হচ্ছে। চোখ খুলছিলেন এবং বন্ধ করছিলেন।আকদোগান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে এ ভবনে উদ্ধারকাজ চলছে। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে নিচ থেকে শব্দ শোনার অপেক্ষা করছি। জীবন্ত একটি বিড়াল খুঁজে পেলেও উদ্ধারকর্মীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠছেন। এ সময় তরুণীর চাচা কাঁদতে কাঁদতে উদ্ধারকারীদের জড়িয়ে ধরে বারবার বলতে থাকেন, আমরা আপনাদের কখনই ভুলব না।
এরই মধ্যে কিছু এলাকায় উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে তুরস্ক। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসন কাজেও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। শুধু তুরস্কেই ১০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষ হাসপাতালে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের পর এখন পর্যন্ত তাঁবু, হিটার ও কলেরা পরীক্ষার কিট নিয়ে জাতিসংঘের শতাধিক ট্রাক উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে। উত্তরের বিভিন্ন জেলায় কার্যক্রম বিস্তৃত করছে জাতিসংঘ। বিশেষ করে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর আশ্রয় চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তুরস্কের পাজারসিকে ভূমিকম্পের কারণে একটি স্থানীয় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে পত্রিকাটির অফিস। আকসু হাবের গেজেটেসি নামের সংবাদপত্রটি প্রকাশ করতেন সাংবাদিক সুত ইয়েনিপিনার। এদিকে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান এক প্রাক্কলনে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের ভৌত কাঠামো ধ্বংসের সরাসরি ক্ষতি ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমান হতে পারে।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস