খেলাধুলা

জোড়া সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করল টাইগাররা

 অসাধারণ, অনন্য, অনবদ্য পারফরম্যান্স বাংলাদেশের। ব্যাট কিংবা বল দুই বিভাগেই বাংলাদেশ যেন দুর্দান্ত, দূরন্ত, উড়ন্ত।

‘পুচকে’ জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে বাংলাদেশ পেল দ্বাদশ ধবল-ধোলাইয়ের স্বাদ। ৭ উইকেটের জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ মাশরাফির দল জিতল ৩-০ ব্যবধানে। আগে ব্যাটিং করতে নেমে শন উইলিয়ামসের ১২৭ রানের ইনিংসে ৫ উইকেটে ২৮৬ রান তুলে জিম্বাবুয়ে। জবাবে ইমরুল কায়েসের ১১৫ ও সৌম্য সরকারের ১১৭ রানে ৪৭ বল আগে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে বাংলাদেশ।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ২৭৮ রান করে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর এক ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরির স্বাদ পেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। ২০১৫ সালে এ কীর্তি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় উইকেটে ২২০ রানের জুটি গড়েন ইমরুল ও সৌম্য। দ্বিতীয় উইকেটে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

বোলিংয়ে বাংলাদেশ ছিল নড়বড়ে। নিয়মিত পারফর্মার মুস্তাফিজ-মিরাজকে ছাড়া সুযোগটি বেশ ভালোমতোই কাজে লাগায় জিম্বাবুয়ে। পাহাড় সমান রান পায় সফরকারীরা। বাংলাদেশকে ছুঁড়ে দেয় রেকর্ড রানের লক্ষ্য। তাতেও মনোবল হারায়নি। অনিন্দ্যসুন্দর ব্যাটিংয়ে কাজের কাজটা হয়ে যায় সহজে। হেসেখেলে বাংলাদেশ পায় জয়ের স্বাদ। আগের দিন মাশরাফি ড্রেসিং রুমের শক্তির কথা শোনাচ্ছিলেন। সেই শক্তির স্থিরচিত্র গোটা সিরিজে বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠল।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট। জারভিসের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ লিটন। শুরুর আঘাতে দমে যায়নি বাংলাদেশ। বরং সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে ইমরুল চালালেন পাল্টা আক্রমণ। তাতে ছড়াল বিস্ময়, মুগ্ধতা।

যদিও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ছিল ঝুঁকি, ছিল আউট হওয়ার শঙ্কা। তবুও ২২ গজে চলল ঝড়ো ব্যাটিং। ভাগ্যদেবী আজ পাশে ছিল। তাইতো লিটন আউট হওয়ার পরও শুরুর ঝড়ে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান ৮০, বাউন্ডারি ১৩টি।

প্রথম ৫ ওভারে রয়েশয়ে খেলেছিলেন ইমরুল, সৌম্য। ৪ বাউন্ডারিসহ রান মাত্র ২৪। খোলস থেকে বেরিয়ে আসেন ষষ্ঠ ওভারে। ৬ থেকে ১০ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশের রান ৫৬, যার ৩৬ রানই আসে বাউন্ডারিতে।

১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ইমরুল। পরের ওভারে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে ইনিংসের প্রথম ছক্কা হাঁকিয়ে দলের রান ১০৩ এ নিয়ে যান। থেমে থাকেননি সৌম্য। ২০তম ওভারে শন উইলিয়ামসকে উড়িয়ে ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ পান। দুজনের ব্যাটিংয়ে ছড়াতে থাকে মুগ্ধতা, বাড়তে থাকে রানের চাকা। লক্ষ্য চলে আসে নাগালেই।

কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির পর নিজের সহজাত আক্রমণত্মক পথ বেছে নেন সৌম্য। ৫৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়া এ ব্যাটসম্যান পরের ২৭ বলে পৌঁছে যান শতরানে। ৪ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকান এ সময়ে। সেঞ্চুরি ছুঁয়েও ক্লান্ত হননি। জিম্বাবুয়ের বোলারদের কড়া শাসন করেছেন। কিন্তও বিপদ ডেকে আসেন সেখানেই। মাসাকাদজাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ১১৭ রানে। ৯২ বলে ৯ চার ও ৬ ছক্কার ঝড় থামে ওখানে। ২২০ রানের রেকর্ড জুটি থাকে সেখানে।

সঙ্গী হারানোর পর ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগুতে থাকেন ইমরুল। এবার আর ভুল করেননি। দেখেশুনে খেলে ৯৯ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ইমরুলের সেঞ্চুরির পর সবার নজর ছিল ভিন্ন জায়গায়।

৩ ম্যাচ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সবথেকে বেশি রান পাকিস্তানের বাবর আজমের। ৩৬০ রান করেছিলেন বাবর। প্রথম ম্যাচে ১৪৪, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০ রান করা ইমরুলের সুযোগ ছিল বিশ্বরেকর্ড গড়ার। রেকর্ড গড়তে হলে ১২৭ রান করতে হতো তাকে। সুযোগটিও ছিল। কিন্তু ১১৫ রানের বেশি করতে পারেননি এ ওপেনার।

দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো আউট হয়েছে অফস্পিনারের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে। ১১২ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় সাজান ইনিংসটি। বিশ্ব রেকর্ড গড়তে না পারলে সতীর্থর রেকর্ড ভেঙেছেন ইমরুল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তামিমের রান ছিল সর্বোচ্চ ৩১২ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ সেঞ্চুরি আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে তামিম করেছিলেন ৩১২ রান। ইমরুলের এ সিরিজে রান ৩৪৯।

জয়ের থেকে ১৪ রান দূরে থেকে ইমরুল সাজঘরে ফিরেন। বাকি কাজটুকু সারেন মুশফিক ও মিথুন। আগের দিন মিথুনের ছক্কায় নিশ্চিত হয়েছিল সিরিজ। এবার মুশফিকের ছক্কায় নিশ্চিত হয়েছে ধবলধোলাই।

এর আগে উলিয়ামসের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে বিশাল সংগ্রহ পায় জিম্বাবুয়ে। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে তখন ব্রেন্ডন টেলরকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন উইলিয়ামস। ১৩২ রানের জুটি গড়ে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রানের চাকা সচল রাখেন। চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলারদের। টেলর ৭৫ রানে সাজঘরের পথ দেখেন। কিন্তু উইলিয়ামস পথ ভুলেননি।

৭৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা উইলিয়ামস পরের ৫১ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এর আগে করেছিলেন ১০২ রান। সেটাও তিন বছর আগে ২০১৫ সালে। আজ সেই রান ছাড়িয়ে যান ১২৯ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে। ১০ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

উইলিয়ামস বাদে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন ব্রেন্ডন টেলর। উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান ৭২ বলে করেছেন ৭৫ রান। ৮ চার ও ৩ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন টেলর। এছাড়া সিকান্দার রাজা ৫১ বলে ৪০, পিটার মুর ২১ বলে ২৮ রান তুলে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

বল হাতে নাজমুল ইসলাম ৫৮ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট পকেটে পুরেন আবু হায়দার, সাইফউদ্দিন।

ব্যাট-বলের দাপটে বাংলাদেশ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে হেসেখেলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, এশিয়া কাপের পর পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। মাশরাফির হাত ধরে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সিরিজের আগে টানা দশ ম্যাচ অপরাজিত ছিল বাংলাদেশ। এবার সেই অঙ্কটা ১৩তে গিয়ে পৌঁছাল। আর জিম্বাবুয়েকে টানা তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশ করল, সব মিলিয়ে চতুর্থ।


এলএবাংলাটাইমস/এস/এলআরটি