সিলেট

সিলেটে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা

সিলেট সিটি করপোরেশনের গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করেন বাংলাদেশের কীর্তিমান রাজনীতিবিদ, সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেছেন, নিজের জন্মস্থানে এমন একটি সম্মাননা গৌরবের। আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। প্রাপ্তির একটি নিয়ম আছে। সেটা মনের প্রয়োজন, মাহাত্ম্যের। এই যে আমাকে সম্মান জানাচ্ছেন, আমি সেই মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি। আমার ভুল ত্রুটি সব ক্ষমা করে দেবেন।

বুধবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহি আলী আমজাদের ঘড়ি ঘরের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাঁর আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ দেওয়া সম্মাননায় আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন।

রাত ৮টায় তিনি অনুষ্ঠান স্থলে হাজির হলে সিলেট মহানগর পুলিশের বাদক দল তাঁকে অর্ভ্যথনা জানায়। এরপর মঞ্চে মেয়র, কাউন্সিলরসহ সিসিকের কর্মকর্তারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা স্মারক হিসেবে শতবর্ষী আলী আমজদের ঘড়ির স্বর্ণ খচিত র‌্যাপলিকা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্থান্তর করেন।

অনুষ্ঠানের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী।

সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আবুল মাল আবদুল মহিত দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তৃতায় নানা স্মৃতিচারণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেন উপস্থিত জনতা।

তিনি বলেন, আমরা ১৪ জন ভাই বোন। আপনারা জানেন আমি এই দেশের বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। এই বছরের জানুয়ারি মাসে আমার বয়স ৮৮ বছর হয়েছে। আমাকে দীর্ঘ জীবন দান করায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। এমন অনুষ্ঠানে কি বক্তব্য দেওয়া যায়? একটি হলো প্রস্তুতি নিয়ে বক্তব্য দেওয়া। আরেকটি হলো উপস্থিত পরিস্থিতি বিবেচনায় বক্তব্য প্রদান করা। আমি দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অনুসরণ করলাম। এতে অবশ্য বেশি স্মৃতিচারণ করতে হয়। আমি স্মৃতিচারণ করতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করব।

ছোটবেলার স্মৃতিচারণায় গ্রামীণ জীবন থেকে শহর জীবনের নানা দিক তিনি তুলে ধরেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ছোটবেলার আনন্দময়, স্বাধীনতার দিনগুলো খুবই উপভোগ্য ছিল। সেইসব দিনের সুখকর স্মৃতির স্মরণে আজকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সিলেটের পরিবেশেই আমার জন্ম। আমার বেড়ে ওঠা। আমি গর্ববোধ করি এখানে জন্মে। এখান থেকে অনেক জ্ঞানীগুনীর জন্ম হবে। আজকে সিলেট নগরে আমি একজন অতিথি। এটা একটা গর্বের বিষয়। নিজের জন্মস্থানে নিজে এমন একটি সম্মান পাওয়া গর্বের।

সিলেটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যমন্ডিত স্থান উল্লেখ্যকরে আবুল মাল আবদুল মুহিত আরো বলেন, জন্মভূমির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সিলেটে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে হযরত শাহজালাল (রহ) এখানে এসেছিলেন। আমরা বেশিরভাগ মানুষই তাঁর মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। ধর্মাচার পালন করেও আসছি। আমাদের এখানে অন্যান্য ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাও সমানভাবে পালিত হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বহু পুরানো।

নগর পরিচালনা সেবামূলক কাজ উল্রেখ্ করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মেয়রকে আমরা শহর পিতা বলি। কেন? তিনি আমাদের সকলের পাহারা প্রধান করেন। কোন গুলমাল হলে সেখানে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমাদের দেখাশোনা করেন। আমিও ছোটবেলায় ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছি। এখনও আমার মনে হয় আমি সুযোগ পেলে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করতে চাই।

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির বক্তৃতায় নর্থইষ্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য্ ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমি সিলেটবাসির পক্ষ থেকে গুণী এই ব্যক্তিত্বেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাচ্ছি। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙ্গালীর প্রতিটি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছেন। স্বাধীনতার পর দেশ গঠনের কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কখনও প্রশাসনের কর্মকর্তা আবার কখনও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনন্য অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রচিন্তক, কূটনীতিক ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের জুড়ি মেল ভার। তাঁর পাঠ, পঠন, জ্ঞান ও প্রাজ্ঞতা বাংলাদেশের অনন্য সম্পদ। তিনি সত্যিকার অর্থেই এক আলোকিত মানুষ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী্। গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা আবুল মাল আবদুল মুহিতকে দেয়ার মধ্যদিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রচলন করলো বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ্ করা হয়। বক্তব্যে বলা হয়, আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবন দীর্ঘতম নদী সুরমার মতো বহমান। বহুমাত্রিক প্রতিভায় গুণীশ্রেষ্ঠ এই মানুষটির সুস্থ-সুন্দর জীবন কামনা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, সংবাদকর্মী, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিগণ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী সাইমুম আনজুম ইভান।   এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/এস

[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]