সফলতা ও হতাশার মিশেলে টানা দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ৮ নভেম্বর বিদায় নিচ্ছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যাবার বেলায় দিলেন আরেকটি বছরের বাজেট। যদিও এ বাজেট বাস্তবায়নের আর সুযোগ নেই তার। বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়বে নতুন মেয়রের। তবে বিদায়ী বাজেটে আরিফ যেমন দিলেন উন্নয়নের ফিরিস্তি, তেমনি সিলেটের উন্নয়নে বৈষম্য ও কিছু স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে না পারার আক্ষেপও ঝরলো তার কণ্ঠে।
আবেগমাখা বাজেট বক্তৃতায় আরিফ বললেন, ১৮৭৮ সালে গঠিত সিলেট পৌরসভা ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হয়। সময়ের পরিক্রমায় পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের ‘তকমা’ অর্জন করেছে সিলেট মহানগরী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অন্য এলাকার তুলনায় সিলেটের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। অথচ সিলেটের খনিজ সম্পদের ভান্ডার এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স সুদীর্ঘকাল থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তবে বিগত কয়েক যুগে সিলেটের সন্তান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সুবাদে এই অঞ্চলের উন্নয়নে কিছুটা গতি এসেছিল। কিন্তু আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সেই উন্নয়নের গতি আবারো স্লথ হয়ে গেছে। বিগত দুটি মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালীন অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কোন প্রকল্পের অনুমোদন পেতে আমাদের যতটুকু দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে তা অন্য সিটি কর্পোরেশনকে করতে হয়নি।
আরিফ বললেন, অপ্রিয় হলেও সত্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি চরম হতাশ হয়েছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, এই নগরীর জন্য আমি ২০১৪ সাল থেকে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সারি নদীতে ৫ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বড়শালায় ১৩ একর জায়গা অধিগ্রহণসহ প্লান্ট নির্মাণের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও আজ পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।
আক্ষেপের সুরে আরিফ বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বতন্ত্র সুয়ারেজ সিস্টেম চালু, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে চারটি পার্কিং ব্যবস্থা, ৪টি পৃথক পৃথক খেলার মাঠ ও ৪টি পৃথক পৃথক গরুর হাটের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও এক্ষেত্রে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। আজ শহর রক্ষা বাঁধ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্ল্যান্টসহ নানাবিধ জনস্বার্থমূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু অনেক আগে থেকেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আমি বারবার সরকারের বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাগাদা দেওয়া স্বত্বেও কোন অগ্রগতি নেই। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, গুরুত্ব বিবেচনায় সিলেটের চেয়ে আরো অনেক পিছিয়ে থাকা সিটি কর্পোরেশনকে বড় বড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অন্য সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনারা এই বিষয়ে একটু খোঁজ নিলেই সবকিছু আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, গত বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে সিলেটের লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও কষ্ট সহ্য করেছেন। এই বন্যার পর আমরা সরকারের তরফ থেকে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি, নদী খননসহ নানামুখী আশার বাণী শুনেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কী না?
অপ্রিয় হলেও সত্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আমার উপর অনেক অবিচার করা হয়েছে। একদিকে সিলেটবাসীর পাহাড়সম প্রত্যাশা অন্যদিকে বিগত দুটি মেয়াদে বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে আমাকে একাই লড়াই করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে হতাশা আমাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু আমি হতোদ্যম হইনি-থেমে যাইনি।
হকারমুক্ত ফুটপাত প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন ফুটপাত হকারমুক্ত করতে আমি আমার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এক্ষেত্রে শতভাগ সফল হওয়া যায়নি।
জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ একযোগে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ না করলে নগরবাসী এই সমস্যা থেকে কোনদিন রেহাই পাবেন না-এটা আমার অভিজ্ঞতালদ্ধ অভিমত। আমরা লালদিঘীরপারে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা স্বত্বেও এখনো ফুটপাত ও রাস্তায় হকাররা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। মহানগরীর যানজট নিরসনের জন্যও অনেক উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও এক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
শেষের বক্তৃতায় মেয়র বলেন, ২০২১ সালে আমরা সিলেটের গুরুত্বপূর্ন সড়ক হিসেবে বিবেচিত জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, রিকশা ভ্যান, হাতাগাড়ি বন্ধ করেছিলাম। এক্ষেত্রে অসহনীয় যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সিলেট নগরীতে এখন এতবেশি যানবাহনের আধিক্য হয়েছে, বিশেষ করে এতবেশি সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। হতাশার বিষয় হচ্ছে, এসব গাড়ী চলাচলের যারা অনুমতি দিচ্ছেন এবং যারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা যেন এক্ষেত্রে নির্বিকার। একটি বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী যানবাহন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা না হলে সিলেট নগরীর যানজটের হিসেবে ‘মিনি ঢাকায়‘ রূপ নেবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
আবেগমাখা বাজেট বক্তৃতায় আরিফ বললেন, ১৮৭৮ সালে গঠিত সিলেট পৌরসভা ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনের উন্নীত হয়। সময়ের পরিক্রমায় পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের ‘তকমা’ অর্জন করেছে সিলেট মহানগরী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের অন্য এলাকার তুলনায় সিলেটের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। অথচ সিলেটের খনিজ সম্পদের ভান্ডার এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স সুদীর্ঘকাল থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
তবে বিগত কয়েক যুগে সিলেটের সন্তান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সুবাদে এই অঞ্চলের উন্নয়নে কিছুটা গতি এসেছিল। কিন্তু আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, সেই উন্নয়নের গতি আবারো স্লথ হয়ে গেছে। বিগত দুটি মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালীন অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কোন প্রকল্পের অনুমোদন পেতে আমাদের যতটুকু দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে তা অন্য সিটি কর্পোরেশনকে করতে হয়নি।
আরিফ বললেন, অপ্রিয় হলেও সত্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি চরম হতাশ হয়েছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হয়, এই নগরীর জন্য আমি ২০১৪ সাল থেকে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সারি নদীতে ৫ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বড়শালায় ১৩ একর জায়গা অধিগ্রহণসহ প্লান্ট নির্মাণের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়া গ্রহণের প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও আজ পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি।
আক্ষেপের সুরে আরিফ বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বতন্ত্র সুয়ারেজ সিস্টেম চালু, যানজট নিরসনের লক্ষ্যে চারটি পার্কিং ব্যবস্থা, ৪টি পৃথক পৃথক খেলার মাঠ ও ৪টি পৃথক পৃথক গরুর হাটের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হলেও এক্ষেত্রে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। আজ শহর রক্ষা বাঁধ, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ প্ল্যান্টসহ নানাবিধ জনস্বার্থমূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, কিন্তু অনেক আগে থেকেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার জন্য আমি বারবার সরকারের বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাগাদা দেওয়া স্বত্বেও কোন অগ্রগতি নেই। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, গুরুত্ব বিবেচনায় সিলেটের চেয়ে আরো অনেক পিছিয়ে থাকা সিটি কর্পোরেশনকে বড় বড় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অন্য সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশন কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আপনারা এই বিষয়ে একটু খোঁজ নিলেই সবকিছু আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে, গত বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে সিলেটের লাখ লাখ মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও কষ্ট সহ্য করেছেন। এই বন্যার পর আমরা সরকারের তরফ থেকে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি, নদী খননসহ নানামুখী আশার বাণী শুনেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কী না?
অপ্রিয় হলেও সত্য, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈষম্য ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আমার উপর অনেক অবিচার করা হয়েছে। একদিকে সিলেটবাসীর পাহাড়সম প্রত্যাশা অন্যদিকে বিগত দুটি মেয়াদে বিরুদ্ধ স্রোতের বিরুদ্ধে আমাকে একাই লড়াই করতে হয়েছে। মাঝে মাঝে হতাশা আমাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু আমি হতোদ্যম হইনি-থেমে যাইনি।
হকারমুক্ত ফুটপাত প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন ফুটপাত হকারমুক্ত করতে আমি আমার কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। এক্ষেত্রে সফলতা এসেছে, কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এক্ষেত্রে শতভাগ সফল হওয়া যায়নি।
জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ একযোগে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ না করলে নগরবাসী এই সমস্যা থেকে কোনদিন রেহাই পাবেন না-এটা আমার অভিজ্ঞতালদ্ধ অভিমত। আমরা লালদিঘীরপারে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা স্বত্বেও এখনো ফুটপাত ও রাস্তায় হকাররা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। মহানগরীর যানজট নিরসনের জন্যও অনেক উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও এক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।
শেষের বক্তৃতায় মেয়র বলেন, ২০২১ সালে আমরা সিলেটের গুরুত্বপূর্ন সড়ক হিসেবে বিবেচিত জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে রিকশা, রিকশা ভ্যান, হাতাগাড়ি বন্ধ করেছিলাম। এক্ষেত্রে অসহনীয় যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সিলেট নগরীতে এখন এতবেশি যানবাহনের আধিক্য হয়েছে, বিশেষ করে এতবেশি সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে যা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। হতাশার বিষয় হচ্ছে, এসব গাড়ী চলাচলের যারা অনুমতি দিচ্ছেন এবং যারা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত আছেন তারা যেন এক্ষেত্রে নির্বিকার। একটি বাস্তবসম্মত ও দীর্ঘমেয়াদী যানবাহন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা না হলে সিলেট নগরীর যানজটের হিসেবে ‘মিনি ঢাকায়‘ রূপ নেবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস