সিলেট

কোন কাজেই আসছে না ব্যয়বহুল নির্মিত এই স্থলবন্দর

প্রায় ৪৯ কোটি টাকা খরচ করে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সীমান্তবর্তী কেদারাকোর্ট এলাকায় বাল্লা স্থলবন্দর অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়মুড়া এলাকায় এখন পর্যন্ত কোনো শুল্ক স্টেশনই নেই। সেখানকার পুরো এলাকা খালি পড়ে আছে, নেই কোনো রাস্তাঘাটও। তাই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আট মাস পার হলেও চুনারুঘাটের এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। বাল্লা স্থলবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে সাবেক নৌসচিব অশোক মাধব রায়ের বিশেষ আগ্রহে। কিন্তু ভারতীয় অংশে শুল্ক স্টেশনের অস্তিত্ব না থাকার কারণে অবকাঠামো নির্মাণের পেছনে খরচ করা অর্থের কার্যত অপচয় হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এখন আর করার কিছুই নেই, শুধু অপেক্ষা—কবে ভারত ওপারে শুল্ক স্টেশন বসাবে। সাড়ে ছয় বছর আগে বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। গত জুন মাসে প্রায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। এই প্রকল্পের আওতায় একটি আদর্শ স্থলবন্দরে যা কিছু দরকার, তার সব কিছুই নির্মাণ করা হয়। ইয়ার্ড, ওজন মাপার যন্ত্র, অফিস ভবন, ডরমিটরি, সীমানাপ্রাচীর, সড়ক, বিভিন্ন পরিষেবা—সব সুবিধাই এখানে আছে। পুরো টাকা খরচ করে প্রকল্পটির ইতিমধ্যে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গত আট মাসেও স্থলবন্দরটি চালু করা সম্ভব হয়নি। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়মুড়া এলাকায় কোনো শুল্কস্টেশন না থাকাই এর একমাত্র কারণ। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করার কোনো সুযোগই নেই। ভারতের ওই অংশে শুল্কস্টেশন নেই, এটা জানা সত্ত্বেও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের করের টাকা খরচ করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে ২৪টি স্থলবন্দর স্থাপন করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে ১২টির কার্যক্রম এখন চালু আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় বাকিগুলোর কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। করের অর্থের অপচয় সরেজমিন বাল্লা স্থলবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশের পাহাড়মুড়া এলাকায় কোনো শুল্ক স্টেশন নেই। নেই ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও। কোনো অবকাঠামোও চোখে পড়েনি। এলাকাটি গাছগাছালিপূর্ণ, কিছু খালি জমিও দেখা যায়। এ নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় ভারতের ত্রিপুরার পাহাড়মুড়া আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধীমান পোদ্দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাদের অংশে এখনো কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। তবে জায়গা অধিগ্রহণ করার কথা তিনি শুনেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাল্লা স্থলবন্দরের সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে আসাম-আগরতলা মহাসড়ক। তবে এ মহাসড়ক থেকে পাহাড়মুড়ায় যাওয়ার তেমন কোনো সুবিধা নেই। বর্তমানে চিকন একটি হাঁটাপথের মতো আছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পর গত আগস্ট মাসে স্থলবন্দরের এসব চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেন বাল্লা স্থলবন্দরের কর্মকর্তারা। ওই চিঠিতে দ্রুত বিষয়টি ভারতের নজরে আনার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু গত আট মাসে এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বাল্লায় স্থলবন্দর বানিয়ে বসে আছি। কিন্তু আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। ত্রিপুরার পাহাড়মুড়ায় স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে গত ডিসেম্বর মাসে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে রাজি হয়েছে। যত দিন তারা এই স্থলবন্দর না বানাবে, তত দিন অপেক্ষা করতে হবে।’ বাল্লা স্থলবন্দরটি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী কেদারাকোর্ট এলাকায় অবস্থিত। ইতিমধ্যে বাল্লা স্থলবন্দরে একজন সহকারী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরও কিছু জনবল আছে। ঢাকা থেকে মাত্র ১৫১ কিলোমিটার দূরে এই স্থলবন্দরের অবস্থান।


 এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস