তারুণ্য

শাবিপ্রবির গবেষণা: চা থেকে তৈরি হবে কোল্ড ড্রিংক্স

এতোদিন চায়ের পরিচয় ছিল সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট উষ্ণ পানীয় হিসেবে। নানা নাম ও মানে বাজারে পাওয়া যায় এই চা। তবে চা তৈরি ও পানের ধরণ ছিল একই। এবার চায়ে বৈচিত্র্যতা আনার চেষ্টা করছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি’ বিভাগের গবেষকরা তাদের দীর্ঘ গবেষণায় এবার চা প্রেমীদের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় এই পানীয়কে।

এখন থেকে চা শুধু উষ্ণ পানীয় নয়, পান করা যাবে কোমল পানীয় হিসেবেও। গবেষকরা চায়ের মূল উপাদান পলিফেনাল, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য উপাদানকে বিদ্যমান রেখে ‘ব্ল্যাক টি’ ও ‘গ্রিন টি’ ফ্লেভারে তৈরি করেছেন ‘টি কার্বোনেটেড বেভারেজ’। ইতোমধ্যে গবেষকরা সফলভাবে কোমল পানীয় হিসেবে চায়ের ব্যবহারে সফলও হয়েছেন। ‘টি কার্বোনেটেড বেভারেজ’ জনপ্রিয় করা গেলে দেশের অভ্যন্তরিণ বাজারে চায়ের চাহিদা বাড়বে। পাশাপাশি বাজারে পাওয়া ক্ষতিকারক কোমল পানীয়ের বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় পানের সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ- এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

গেল কয়েক বছর থেকে দেশে বাড়ছে চায়ের উৎপাদন। গেল বছর ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চায়ের জাতের উন্নয়ন, নতুন ধরণ তৈরি এবং বিকল্প ব্যবহার তৈরি না হওয়ায় উৎপাদন বেশি হলেও কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাগান মালিকরা। চায়ের ব্যবহার ‘উষ্ণ’ পানীয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় বাড়ছে না চায়ের ব্যবহার। নতুন প্রজন্মের কাছে চা-কে কিভাবে আরো জনপ্রিয় করা যায় সেটা নিয়ে অনেক দিন থেকে কাজ করছিলেন শাবিপ্রবি’র ‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি’ বিভাগের একদল গবেষক। চায়ের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছিলেন গবেষনা। অবশেষে তারা সফলও হয়েছেন।

২০১৮ সালে ‘চা প্রদর্শনী’তে চায়ের বহুমূখী ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্য থেকে উদ্ধুদ্ধ হয়ে চা থেকে ‘কার্বোনেটেড বেভারেজ ড্রিংঙ্কস’ তৈরির গবেষণা শুরু করেন শাবিপ্রবির গবেষকরা। ‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইখতেখার আহমেদ আরও দুই সহযোগীকে নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে শুরু করেন গবেষনা। প্রায় তিনবছর গবেষনা শেষে তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছান। উদ্ভাবন করেন ‘টি কার্বোনেটেড বেভারেজ’।

অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ জানান, দেশের শিশু-কিশোরদের চায়ের চেয়ে কার্বোনেটেড বেভারেজের প্রতি আগ্রহ বেশি। এছাড়া গরমের দিন চা থেকে বেভারেজ পানে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু বাজারে যেসব কোমল পানীয় পাওয়া যায় সেগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী নয়। ক্ষেত্রবিশেষ এগুলো ক্ষতিরও কারণ। তাই চায়ের গুনাগুন অক্ষুন্ন রেখে চা দিয়ে কোমল পানীয় তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ গবেষনা সফল হয়েছে।

অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদের সাথে গবেষনা দলে ছিলেন তার বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- এফইটি বিভাগের শিক্ষার্থী নাবিল নওরোজ বৈশাখ ও মো. আল ইমরান জাকারিয়া। চায়ের বিকল্প ব্যবহার উদ্ভাবন করতে পেরে তারাও বেজায় খুশি। বৈশাখ ও ইমরান জানান, তাদের শিক্ষক ড. ইফতেখার আহমেদের নেতৃত্বে তারা প্রায় তিনবছর গবেষণা শেষে মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর ও আকর্ষণীয় ‘টি-কার্বোনেটেড বেভারেজ’ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘ব্ল্যাক টি’ ও ‘গ্রিন টি’ উভয় ধরণ নিয়ে নতুন এই বেভারেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চায়ের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে তারা আরও অধিকতর গবেষনা করতে চান।

গবেষনা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ জানান, ‘টি-কার্বোনেটেড বেভারেজ’ তৈরির কাঁচামালের সিংহভাগই আমাদের দেশে রয়েছে। তাই এর উৎপাদন খরচও কম পড়বে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও বৃহৎ পরিসরে এই গবেষনা হতে পারে। চা থেকে তৈরি কোমল পানীয়ের বাণিজ্যিক চাহিদা তৈরি করা গেলে দেশের চা শিল্প ও অর্থনীতি লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।   এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/ওয়াই

[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]