তারুণ্য

জীবন বাঁচাতে ১২৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি

ইউক্রেনের ডনবাসের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী মারিউপোলের পূর্ণ দখল নেয়ার দাবি করেছে রুশ বাহিনী। শঙ্কা রয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হবে। এমন ভীতিকর পরিস্থিতিতে মারিউপোলের বাসিন্দা ইয়েভগেন ও তার স্ত্রী টেটিয়ানা সিদ্ধান্ত নেন, এই মৃত্যুপুরী থেকে সন্তানদের নিয়ে পালাতে হবে। অবশেষে তারা মারিউপোল থেকে পায়ে হেঁটেই ১২৫ কিলোমিটার পাড়ি দেন।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই নিজেদের বাঙ্কারে বন্দি করেছিলেন ইয়েভগেনরা। শুধু খাবার আনতে বাইরে যেতেন। মারিউপোলের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা লাশের স্তূপ দেখাটা এই দুই মাসে প্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল ওই দম্পতির। কিন্তু গত রোববার ভেবে ফেলেন মারিউপোলে আর থাকা যাবে না। দূরে পশ্চিমের কোনো শহরে চলে যেতে হবে গোটা পরিবারকে। কিন্তু যাওয়ার উপায় কী? একমাত্র রাস্তা হল হাঁটা। ১২ থেকে ৬ বছরের চার সন্তানকে সে ভাবেই বোঝান টেটিয়ানা।

তিনি বলেন, ‘সন্তানরা এটাকে অ্যাডভেঞ্চার মনে করেছিল। তাই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাঙ্কার থেকে প্রথম বার বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে লাশের স্তূপ দেখে ওরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবং ক্ষুধার চেয়ে বোমা হামলায় মারা যাওয়াটা কম ভীতিকর মনে হয়েছে ওই সময়। মারিউপোলে এখন আর সামান্য খাবারটুকুও পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই ওই শহর আমাদের ছাড়তেই হত।’

রোববার সকাল হতে না হতেই সবকিছু পিঠে বেঁধে বেরিয়ে পড়েন তারা চার সন্তান নিয়ে। একটা ভাঙাচোরা ট্রলি সংগ্রহ করেছিলেন ইয়েভগেন। তাতে মালপত্রগুলো রাখা হয়। একদম ছোট মেয়েকে বসিয়েছিলেন ট্রাইসাইকেলে। গোটা রাস্তা ট্রলি ঠেলেছেন ইয়েভগেন। আর সাইকেল ঠেলেছেন তার স্ত্রী। টানা পাঁচ দিন ও চার রাত পায়ে হেঁটে ১২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ইয়েভগেন ও টেটিয়ানা পরিবার নিয়ে জপোরিঝিয়ায় পৌঁছান। সেখান থেকে একটি জনাকীর্ণ ট্রেনে ওঠে। সেখান থেকে স্বাভাবিক জীবনের জন্য পশ্চিম ইউক্রেনের আরেকটি বড় শহর ইভানো-ফ্রাংকিভস্কে যাওয়ার পরিকল্পনা ইয়েভগেনদের।

রুশ বাহিনী পথ আটকায়নি?
ইয়েভগেন জানালেন অসংখ্য রুশ চেক পয়েন্ট পেরোতে হয়েছে তাদের। তবে রুশ সেনা তাদের সহযোগিতাই করেছে। সবারই প্রশ্ন ছিল একটাই। মারিউপোল থেকে আসছ? তোমরা রাশিয়ার কোনো শহরে চলে যাও। ইউক্রেনে আর থাকা কেন? তবে ইয়েভগেন জানিয়েছেন, প্রাণ বাঁচাতে প্রাণের শহর ছেড়েছেন, কিন্তু দেশ ছাড়বেন না। তাদের চার সন্তান মানুষ হবে ইউক্রেনের মাটিতে। সেই স্বপ্নই এখন দেখছেন এই দম্পতি।   এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/আই

[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]