২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে উবারে গড়ে প্রায় প্রতি আট মিনিটে একবার যৌন নির্যাতন বা যৌন অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি এমন একটি সংখ্যা যা উবার নিজে যে তথ্য প্রকাশ করেছে তার থেকে অনেক বেশি।
উবার প্রকাশ্যে নিজেদের যাত্রীদের জন্য নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করে। তারা বিভিন্ন মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালিয়ে এবং ওয়েবসাইটে শক্তিশালী রিপোর্ট দিয়ে বলেছে, তাদের পরিষেবায় গুরুতর হামলার ঘটনা খুবই কম। কিন্তু ভিতরে, ডেটা বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যার ওপর কাজ করেছে। তারা উন্নত মিলে যাওয়ার অ্যালগরিদম, বাধ্যতামূলক ভিডিও রেকর্ডিং এবং নারী যাত্রীদের নারী চালকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার মতো পদ্ধতি পরীক্ষা করেছে।
তবুও, উবার তাদের চালকদের এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাধ্য করেনি বা সময় মতো চালু করেনি। যাত্রীদেরও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম সতর্ক করেনি, এমন অভিযোগ উঠে অন্তত ১২ জন বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মী, অভ্যন্তরীণ নথি এবং আদালতের তথ্য থেকে। এসব নথি যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত বড় মামলার অংশ হিসেবে গোপন রাখা হয়েছে।
উবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মূল কারণ ছিল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানো, ব্যয়বহুল মামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এবং তাদের ব্যবসায়িক মডেল রক্ষা করা। উবার চালকদের কর্মী হিসেবে নয়, স্বাধীন ঠিকাদার হিসেবে গণ্য করে, যার ফলে চালকদের বেনিফিট বা অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে হয় না এবং তাদের তেমন তদারকি করা হয় না।
২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৪০০,১৮১টি উবার যাত্রায় যৌন নির্যাতন বা যৌন অসদাচরণের অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২,৫২২টি ছিল গুরুতর যৌন নির্যাতনের ঘটনা, যা আগে প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে উবার ওই সময়ের পর থেকে নতুন তথ্য প্রকাশ করেনি, যদিও আদালতের নথি জানাচ্ছে অভিযোগ বেড়েছে।
উবারের আমেরিকা নিরাপত্তা প্রধান হানা নিলস বলেন, “যৌন নির্যাতনের কোনো ‘সহ্যযোগ্য’ মাত্রা নেই।” তিনি জানান, অভিযোগের প্রায় ৭৫ শতাংশ ছিল “কম গুরুতর” – যেমন কাউকে বাহ্যিক চেহারা নিয়ে মন্তব্য করা, ফ্লার্ট করা বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা। তিনি আরো বলেন, এসব অভিযোগের মধ্যে কিছু ভুল বা প্রতারণামূলকও থাকতে পারে, যেমন কেউ রিফান্ড পাওয়ার জন্য মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
উবার স্বীকার করেছে, যাত্রী ও গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে। তবে তারা আশা করছে ২০২৩ সালের পর থেকে গুরুতর যৌন নির্যাতনের হার ২০১৭ সালের চেয়ে কম হবে।
উবারের অভ্যন্তরে কর্মীরা বলেন, নিরাপত্তার ভয়, হুমকি, লজ্জা কিংবা চালকদের যাত্রীদের ঠিকানা জানায় অনেক ঘটনা রিপোর্ট হয় না। উবারের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের বেশিরভাগই নারী এবং ঘটনা বেশি ঘটে রাতে, বিশেষ করে সপ্তাহান্তে, যেখানে যাত্রা শুরু হয় বার বা পানশালার কাছে। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই পুরুষ—চালক বা যাত্রী—যাদের বিরুদ্ধে পূর্বেও অভিযোগ ছিল। মদ্যপান করা যাত্রীরা বিশেষ ঝুঁকিতে থাকে।
উবার বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে – যেমন জিপিএস ট্র্যাকিং, অ্যাপে ঐচ্ছিক অডিও রেকর্ডিং, এবং জরুরি ৯১১ কলের বাটন। তবে এসব সত্ত্বেও ২০২৩ সালে হিউস্টনে এক নারী যাত্রীকে চালকের ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার পর চালককে বরখাস্ত করা হয়।
২০১২ সাল থেকে উবার এই ধরনের সমস্যার বিষয়ে অবগত ছিল। ২০১৭ সালে একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ ও কোম্পানির দুর্নীতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিষ্ঠাতার পদত্যাগ হয়। তার বদলে নতুন সিইও দায়িত্ব নেন এবং কোম্পানির ভাবমূর্তি বদলের চেষ্টা শুরু হয়।
তবে ব্যবসার মডেল ও ব্যয়বহুলতা জনিত কারণে তারা চালকদের ভিডিও রেকর্ডিং বাধ্যতামূলক করতে পারেনি। চালকদের কর্মী না ধরে স্বাধীন ঠিকাদার হিসেবে রাখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
২০১৯ সালে মহিলাদের জন্য মহিলা চালকের সঙ্গে যাত্রী মিলানোর পাইলট চালু হলেও, মার্কিন বাজারে চালু করতে দেরি হয়। অভ্যন্তরীণভাবে ছিল সাংস্কৃতিক ও আইনি ঝুঁকি এবং লিঙ্গ বৈষম্যের মামলার ভয়।
উবার এখনো যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তি ও নীতি চালু করছে, কিন্তু ঘটনার সংখ্যা কমার বদলে বাড়ছে। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য এবং কর্মীদের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, কখনো কখনো তারা সমস্যা লুকানোর চেষ্টা করেছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশ্বাস পেতে চান, তবে ‘একজন’ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য সত্যিকারের যত্ন নিতে হবে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম