বাংলাদেশ

আইয়ুব বাচ্চু আর নেই, শুক্রবার শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা শেষে চট্টগ্রামে দাফন

ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসভবনে আইয়ুব বাচ্চুকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে আইয়ুব বাচ্চুকে অচেতন অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে বেলা সাড়ে এগারটায় ড. মির্জা নাজিম উদ্দিন হাসপাতালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।

এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মইনুদ্দিন রাশেদ জানিয়েছেন, তার সহকারী সকালে মগবাজারের বাসায় গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আইয়ুব বাচ্চুর ভাই এরফান চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি তার মগবাজারের বাসায় একাই থাকতেন।  ১৬ অক্টোবর রংপুরে একটি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

জনপ্রিয় এ শিল্পীর মৃত্যুতে তার স্বজন, সহশিল্পী, সহকর্মী ও ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চার দশক বাংলাদেশের তরুণদের গিটারের মূর্ছনায় মাতিয়ে রাখা এ রকস্টারের বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই গিটার বাদনে তার খ্যাতি ছিল।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন এলআরবি ব্যান্ডের জনপ্রিয় এই শিল্পী। সংগীত জীবনের দীর্ঘ চার দশকে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করেন বাচ্চু।

এরপর ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। সফলতা পান তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ দিয়ে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম ‘এল আর বি’ প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।

‘সুখ’ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ গানগুলো সে সময় দারুণ জনপ্রিয় হয়। তার গাওয়া ‘চলো বদলে যাই’ বাংলাদেশের সংগীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই।

গিটারে সারা ভারতীয় উপমহাদেশে আইয়ুব বাচ্চু বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুনভাবে অণুপ্রাণিত। ২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ‘ট্রাফিক সিগন্যাল’ ও ‘হলুদ বাতি’ শিরোনামের দুটি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা শেষে মায়ের কবরের পাশেই দাফন
চট্টগ্রাম শহরে মায়ের কবরের পাশেই সমাধিস্থ হবেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু।

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ১৮ অক্টোবর দুপুর সোয়া বারটার দিকে এ তথ্য জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ।

তিনি আরও জানান, ১৯ অক্টোবর সকাল দশটার পর আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার মরদেহ সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত রাখা হবে।

এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন,‘আজ বাচ্চুর মরদেহ হিমাগারে থাকবে। আগামীকাল জুম্মার নামাজের আগে তার মরদেহ হাইকোর্ট সংলগ্ন ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে যাওয়া হবে। নামাজের পর সেখানে তার জানাজা হবে। সেখান থেকে তার মরদেহ আবার হিমাগারে নিয়ে আসা হবে।’

‘আমরা তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি তারা জানিয়েছেন, বাচ্চুর এক ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছে।’

‘তাদের ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হবে। দেশে ফিরে তারা তার পিতাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাবেন। শনিবার সকালে আশাকরি তারা চট্টগ্রাম পৌঁছাবেন। এরপর সেখানে একটি জানাজা হবে। তারপর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি