বাংলাদেশ

ঢাকায় প্রথম বিনিয়োগ সম্মেলন ২৪-২৫ জানুয়ারি

‘বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে দূরদর্শী ও জ্ঞানীরা দ্রুত বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে। এই ধরনের সুযোগ এখন বাংলাদেশে রয়েছে। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চাই, সে জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা আপনাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনাকে সম্পূর্ণভাবে স্বাগতম জানিয়ে আমার সরকার সব ধরনের সহায়তা

দেবে’—এমন বাণীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ডাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি (বিআইপি) সামিট ২০১৬’ আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিনিয়োগ বোর্ড। ওই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা যোগ দেবেন। তাঁদের উদ্দেশেই এই বাণী বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়েবসাইটে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৪-২৫ জানুয়ারি ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল  বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিতভাবে সম্মেলনের আয়োজন করছে। বিআইপি সামিট মূলত ‘বাংলাদেশ সামিট’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাবে। এবারই প্রথম আমরা এই ধরনের সম্মেলন করছি। বিশ্বের বৃহৎ শিল্প গ্রুপ ও ব্র্যান্ডগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের সুযোগও রাখা হয়েছে। এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ছাড়াও গবেষক ও শিক্ষাবিদ, শিল্প ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেবেন। নাভাস চন্দ্র মণ্ডল আরো বলেন, এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা, সরকারের নেওয়া বিনিয়োগবান্ধব বিভিন্ন নীতি ও প্রণোদনার তথ্য তুলে ধরা হবে। মূলত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতেই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরাও বক্তব্য দেবেন, যাতে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হন। এর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ডলার। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১৫৯ কোটি ডলার। আর গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেশীয় বেসরকারি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিমাণ এক হাজার ৭২ কোটি ডলার, আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৬৩৯ কোটি ডলার। এত অল্প পরিমাণ বিনিয়োগে ভর করে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে না। সে জন্য বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এ উদ্যোগ নিয়ে বিনিয়োগ বোর্ড বলছে, সম্মেলনে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তিনটি মূল বার্তা তুলে ধরছে বিনিয়োগ বোর্ড—এক দশক ধরে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা যুব কর্মশক্তি এবং ৩০০ কোটি মানুষের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ।
বিনিয়োগ বোর্ডের ওয়েবসাইটে এই সম্মেলন সম্পর্কে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো দাননির্ভরতা কমিয়ে বাণিজ্যনির্ভরশীল হচ্ছে। বাংলাদেশও বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না, যদিও বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্যতম পছন্দের জায়গা। বেসরকারি বিনিয়োগ গত কয়েক বছর ধরে এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। বেসরকারি খাতের আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন সময় নানা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এসব নীতির সমন্বিত বাস্তবায়ন না হওয়ায় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমেছে। দেশে বিনিয়োগের এই স্থবিরতা কেবল আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বাধাগ্রস্ত করবে না, সরকারের নেওয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনও ব্যাহত করবে। তাই বিনিয়োগ পরিবেশ বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।
দুই দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারের নেওয়া নীতিসহায়তার তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ ও বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার ইসলাম। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পিপিপি অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ আফসর এইচ উদ্দিন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহা. হাবিবুর রহমান খান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসাইন, লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. আবদুল হান্নান, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান কোটস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পল এ ফ্রোমেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী সুনীল কুশাল এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের বাংলাদেশ প্রধান ফ্রানকোইস ডি মারিকোর্ট বক্তব্য দেবেন।