বাংলাদেশ

‘জয় বাংলা’ নয়, আমাদের স্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ : এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন,  ‘আমাদের স্লোগানতো ‘জয় বাংলা’ নয়, আমাদের স্লোগান হলো  ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ তিনি বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি আমার সাংসদরা সংসদে দাঁড়িয় ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। অথচ, আমাদের স্লোগান হলো ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীস্থ জাপা কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ, প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আর মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করবো না। সরকারের হাতে আরো তিন বছর সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে আমরা দলকে শক্তিশালী করবো।

তাকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পদ নিয়ে এরশাদ বলেন, ‘আমার বিশেষ দূত পদে এবং  মন্ত্রীপরিষদে দলের প্রতিনিধিত্ব থাকা না থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। তিনি আমাকে সম্মান দেখিয়ে বিশেষ দূত পদ দিয়েছেন, পতাকা দিয়েছেন, আমি উনাকে না জানিয়ে এ পদ ছাড়তে পারি না, তাহলে বিষয়টি অসম্মানজনক দেখায়।’

এক প্রসঙ্গে তিনি নিজের এমপিদের প্রতি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয়, আমার সাংসদরা সংসদে দাঁড়িয় যখন ‘জয় বাংলা’ বলে বক্তব্য শেষ করেন। আমাদের স্লোগানতো ‘জয় বাংলা’ নয়, আমাদের স্লোগান ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’ আর ‘জয় বাংলা’ বললেই যে এমপিরা আকাশে উঠে যাবে তাওতো নয়।’

এ সময় দলের ভেতরের অনেক ঘটনা প্রবাহ ও বাস্তবতা নিয়েও আলোচনার অবতারণা করেন এরশাদ।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং জিয়াউদ্দিন বাবলুকে উদ্দেশ্য করে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, তোমরা একটা সম্মেলন করে দেখাও। তারা সম্মেলন করতে পারেনি। এক তারিখে (১ জানুয়ারি ২০১৬) সম্মেলন ছিল। ওরা আমাকে বলেছিল, দশ লাখ লোক হবে। সেখানে দশ হাজার লোকও হয়নি। আমি কষ্ট করে, মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা এনে দিয়েছি। কিন্তু আসলে আমরা সুফল পাইনি।’

জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রশংসা করে এরশাদ বলেন, ‘হাওলাদার তিনটি কাউন্সিল মিটিং করেছিল। একটি মিটিংয়ে ৭৫০০০ লোক এনেছিলেন, সবাইকে খাইয়েছিলেন। কিন্তু আমি তাকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দিয়েছিলাম। একটা দিনও সে আমার সমালোচনা করেনি। চেয়ারম্যানের প্রতি তার আনুগত্য আছে। সে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। আমি খুব খুশি।’

মতবিনিময় সভায় দলের এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘আপনারা যারা এমপি হয়েছেন, অপরাধ করেননি। পার্টির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন। দেশের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়েছেন।’

জিএম কাদের আরো বলেন, ‘আমাদের কারো কারো মনের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে, সেটি দেশের মানুষের স্বার্থে ভুলে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের সবাইকে অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে দলের মধ্যে আর যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কেউ চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জাতীয় পার্টির অবস্থান বিশ্লেষণ করে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি বা না পারি আমরা একটা অবস্থানে যাবো। আমরা চেষ্টা করব ক্ষমতায় যাওয়ার। এতোদিন আমাদের রাজনীতি পরিস্কার ছিল না, কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল।’

তিনি বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্তের কারণেই আজ জাপার রাজনীতিতে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে জাপা বিভিন্ন মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে। দেশবাসীর কাছে জাতীয় পার্টি একটি আলোচনার বিষয় হিসেবে চলে এসেছে।’