বাংলাদেশ

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কড়া সমালোচনায় সংসদ

‘অবসরের পরে বিচারকদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী’- প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন সংসদ সদস্যরা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপিরা এই সমালোচনা করেন।

তারা বলেন, ‘অবসরের পরেও রায় লেখার রীতি বা রেওয়াজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। তবে, প্রধান বিচারপতি চাইলে বাংলাদেশে চলে আসা দীর্ঘদিনের এই রীতি বদলাতে পারেন।’

বিকেল সাড়ে চারটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর এ আলোচনার সূত্রপাত করেন পিরোজপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।

পরে একে একে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে সংসদে বক্তব্য রাখেন- আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু।

আইন ও সংসদ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বলেন, ‘অবসরের পরে রায় লেখার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এখন প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন- এই রেওয়াজ খারাপ, তাহলে তিনি পরিবর্তন করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘তবে, পশ্চাতে ফিরে গিয়ে সেটি করা যাবে না। যে রায় হয়ে গেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অধিকার কারো নেই।’

সুরঞ্জিত বলেন, ‘পশ্চাতে যেতে চাইলে কোনোভাবেই তা গ্রহণ করা হবে না। সামনের দিকে যেতে যদি প্রধান বিচারপতির কোনো পরামর্শ থাকে, তাহলে আমরা সেদিকেই যাব। আমরা আর পশ্চাতে ফিরে যাব না।’

তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধান বিচারপতি) যখন এ নিয়ে কথা বলেন, তখন মানুষের মনে নানা প্রশ্ন আসে। আর তারা আমাদের মনে করে ঘর পোড়া গরু। যেন আমরা কোনো অশুভ শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছি।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তিসি স্পষ্ট বলেছেন- পুরনো রায়ের কোনো পরিবর্তন হবে না।’

তিনি বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা অসাংবিধানিক হতে পারে না। আমাদের যে সংবিধান তার কোনো আর্টিকেলে একথা লেখা নেই যে, বিচারপতি তার অবসর গ্রহণের পর রায় লিখতে পারবেন না। তা যদি হয় তাহলে এটা আর যাই হোক অসাংবিধানিক হতে পারে না।’

প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি।’

তার ওই বক্তব্য আসার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তার ভিত্তিতে বিএনপি বলছে, অবসরের পরে লেখা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের রায়ও তাহলে অবৈধ।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্ট ডিভিশনের স্টাবলিশ রুলস এ যেটা আছে, রায় যতদূর সম্ভব এজলাসে বসেই দেওয়ার কথা। কিন্তু যদি এমন হয় তারা রায়টা এজলাসে দিতে পারছেন না মামলার চাপের জন্য। তাহলে অর্ডারিং পোর্শন বলার পরে এজলাসের বাইরে রায় লেখার অধিকার রাখে।’

তিনি বলেন, ‘এপিলেট ডিভিশন রুলস আছে। সেখানে কিন্তু একথা নাই যে এজলাসে দিতে হবে। পরিষ্কার লেখা আছে। রায় দিতে হবে- ওপেন কের্টে অর্ডারিং পোর্শন পর্যন্ত। রায় পরে লেখা হবে। অবসরে যাওয়ার পর আর লেখা যাবে না সেটা লেখা নাই।’


আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের প্রধান। তার কিছু সমস্যা আছে সেটা আমরাও জানি। কোনো বিচারপতি রায় অনেক দেরি করে লেখেন। যদি রায় দেরি করে লেখেন তাহলে জনগণ ভোগান্তিতে পড়েন। জনগণ চায় তাদের রায় দ্রুত হাতে পেতে। আমরাও দেখেছি রায় অনেক দেরি করে লেখা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা যদি তিনি দূর করতে চান তাহলে প্রধান বিচারপতি একটা প্র্যাকটিস ডিরেকশন দিতে পারেন। সেই প্র্যাকটিস ডিরেকশনে উল্লেখ করতে পারেন, অবসরে যাওয়ার তিন মাস বা চার মাস পর বা একটা টাইম ফ্রেম দিতে পারেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে- প্রধান বিচারপতির কথা বলার পর অনেক কথাই অনেকে বলেন, জনগণকে যারা বাসের মধ্যে পেট্রোল বোমায় মেরে ফেলে, তারা এই কথাটা লুফে নেন।’