জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও শোভন কর্মপরিবেশ নারী শ্রমিকদের কাজে টিকে থাকার অন্যতম শর্ত হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে। নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে—একদিকে প্রতি বছর নারী শ্রমিক তাদের চাকরি থেকে ঝরে পড়ছেন, অন্যদিকে নতুন যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অনলাইনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘জেন্ডার প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ’ ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যথোপযুক্ত আইনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে কর্মজীবী নারী। ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী প্রচারাভিযান উপলক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, আইএলও বাংলাদেশ শাম্মিন সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানির মধ্যে যৌন হয়রানি একটি বড় বিষয়। কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের সহিংসতা যতদিন থাকবে, ততদিন আমরা শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব না। আর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। যৌন হয়রানির বিষয়ে শ্রমিকরা যেন নির্ভয়ে তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন, সে বিষয়ে মালিকপক্ষের দিক থেকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মানিত সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, ‘হয়রানি ঘটে যাওয়ার পর সোচ্চার না হওয়া বা প্রতিবাদ না করা আমাদের সংস্কৃতিতে দাঁড়িয়ে গেছে। এই মানসিকতা থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক আয়শা সিদ্দিকী বলেন, নারীকে সহিংসতা থেকে মুক্ত করতে হলে তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতার বড় একটি কারণ হচ্ছে বাল্যবিবাহ। সুতরাং নারীকে সহিংসতা থেকে মুক্ত করতে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নারীর অবাধ চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে মানসিকভাবে পরিবর্তিত হতে হবে এবং নারীর কাজকে মর্যাদাপূর্ণ করে তুলতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হাজেরা খাতুন বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে হলে সরকারি, বেসরকারি ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জোর দাবি জানাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। সাইবার বুলিংয়ের বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। গৃহকর্মীদের জন্য হেল্পলাইন চালু করার পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীদের জন্য সুরক্ষা সেল তৈরি করতে হবে।
ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন। গবেষণায় দেখা গেছে, পোশাকশিল্পে নারীকর্মী ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ১৯৮০ সালে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মোট কর্মরত শ্রমিকের ৮০ শতাংশ, ২০০৫ সালে তা কমে হয় ৭০ শতাংশ, ২০১৮ সালে এ সংখ্যা আরো কমে ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়। সবশেষ ২০২১ সালে নারী কর্মীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কর্মজীবী নারীর সভাপতি দিলনাশিঁ মোহসেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী, ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি। অনলাইন মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস