বাংলাদেশ

তাপদাহের দোহায় দিয়ে এসির দাম রাখা হচ্ছে বেশি

দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। গরমে দুর্বিষহ মানুষের জীবন। ঘরে বাইরে কোথায় যেন শান্তি নেই। এমন অসহনীয় তাপমাত্রায় স্বস্তি পেতে রাজধানীর সচ্ছল মানুষেরা ছুটছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) যন্ত্র কিনতে বৈদ্যুতিক পণ্যের শোরুম বা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এসি বিক্রি। তবে ক্রেতারা বলছেন তাপদাহের দোহায় দিয়ে এসির দাম রাখা হচ্ছে বেশি।  
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে আজ ২৯ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খোদ রাজধানীতে এই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে আর্দ্রতা বেশি থাকায় সব জায়গায় ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে। এই নিয়ে পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে ২৮ এপ্রিল হিট স্ট্রোকে সারাদেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে একদিনে হিট স্ট্রোকে এত মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড নেই।   তাপদাহ সহ্য করতে না পেরে এসি  কিনতে আসা মনোয়ার হোসেন  বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ এসির চাহিদা বেড়ে গেছে আর এই সুযোগে এসি ব্যবসায়ীরা এসির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে  এসি কিনতে হচ্ছে।’   বাসায় বাচ্চাদের আরামের জন্য এসেছেন এসি কিনতে এসছেন ব্যবসায়ী মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, ‘এবারের গরম অসহ্য। বাসায়  শিশু ও বয়স্করা কষ্ট পাচ্ছেন। তাই এসি কিনতে এসেছি। তবে এসির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।’
মুরাদ হাসানের পরিবারের মতো তীব্র গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন এসির দোকানে। যার যার সাধ্য
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। বছরে এসির বাজার ৬ হাজার কোটি টাকা। এবার  বাসাবাড়ির জন্য সাড়ে ৬  লাখ এসি বিক্রি হতে পারে। এদিকে এসির পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে ফ্যানের। বাসাবাড়িতে এক থেকে দুই টন ক্ষমতার এসির চাহিদা বেশি। তবে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে দেড় টন ক্ষমতার বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি। কম আয়ের মানুষের পছন্দ এয়ার কুলার। চীনের তৈরি গ্রি ব্র্যান্ডের এসির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্টের রিটেইল সেলসের ইনচার্জ মোহাম্মদ মামুন মিয়া বলেন, এসির বাজারে গ্রির চাহিদা সবসময়ই বেশি। গত ১০ দিনে এসির বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হওয়ায় ইনভার্টার এসির চাহিদা বেশি। একটি গ্রির এক টনের নন ইনভার্টার এসি ৬৬ হাজার ৯৯০ এবং ইনভার্টার ৬৯ হাজার ৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র‌্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের পর থেকে সারাদেশ এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গেলো দুই সপ্তাহ ধরে বিক্রি বেশি বেড়েছে। রাজধানী ঢাকায় এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ঢাকার বাইরে জেলা–উপজেলা পর্যায়েও এসির বেশ চাহিদা রয়েছে। ভিশন ইলেকট্রনিকসের হেড অব মার্কেটিং মোহিত চক্রবর্তী জানান, গত বছরে একই সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে এসির চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।  তবে আমাদের এসির দাম বাড়েনি।
রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, নিউমার্কেট, ওয়ারি, বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান, নবাবপুর রোডের ইলেকট্রনিক্স দোকান, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোয় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তারা এসি, সিলিং ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার কিনছেন। তবে দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে এসি ক্রেতার সংখ্যা বেশি।
লক্ষ্মীবাজারে ওয়ালটন ব্রাঞ্চের ম্যানেজার উত্তম বলেন, আগের তুলনায় ওয়ালটন এসির বিক্রি তিনগুণ বেড়েছে। আগে যদি আমার এই শোরুমে দৈনিক ৫-৬টা এসি বিক্রি করতাম, এখন করছি ১৫-২০টা। গরমের তীব্রতায় মানুষ ধারকর্জ করে হলেও এসি কিনছে শান্তিতে থাকার জন্য। এসির দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে আমাদের এসির দাম বাড়েনি। অনলাইনে ও শোরুমে এসি কেনার পার্থক্যে আছে কিছু। অনেকে শোরুমে না এসে অনলাইনে এসি অর্ডার করছেন।  তবে বেশি না সর্বোচ্চ দু’তিন হাজার টাকা। এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস