চালু হওয়ার পর থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জালিয়াতির ঘটনা অহরহ। এমন আবহে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোর বিরোধী দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। স্থানীয় সরকার নির্বাচন কিংবা আঞ্চলিক পর্যায়ের নির্বাচনেও এই ভোটযন্ত্রের ব্যবহার নিয়েও রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ অবস্থায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ইভিএম মেশিন নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভিএমের ব্যবহার সহজ হলেও সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বিতর্কের শীর্ষে ছিল এই ভোটযন্ত্র। জোর করে বোতাম টিপে দেওয়া, নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট সেট রাখা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ভোট চলাকালে মেশিন হ্যাং, ডিজিটাল কারচুপিতে ফল পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই মেশিন ঘিরে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ভোটারদের মাঝেও এই মেশিন নিয়ে রয়েছে অস্বস্তি। এই পরিস্থিতিতে হাজার কোটি টাকার এসব মেশিন একেবারে বাতিল না করে, ব্যবহারের বিকল্প খুঁজছে নির্বাচন কমিশন। তবে বর্তমানে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মেশিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রতিমাসের নির্ধারিত সভায় ঘুরেফিরে উঠে আসছে ইভিএম ইস্যু। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বিতর্কিত এই ভোটযন্ত্র জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে চায় না ইসি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার এসব মেশিন বাতিলের খাতায় তোলার পক্ষেও নন তারা। এজন্য স্থানীয় নির্বাচনে চাহিদার প্রেক্ষিতে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করা যেতে পারে কি-না সেটা ভাবতে হবে। এর আগে ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনে ধরা পড়ে যান্ত্রিক ত্রুটি। এভাবে মেরামতের জন্য অর্থের যোগানের অভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় অকেজো মেশিনগুলো মেরামত ও সংরক্ষণে ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি থেকে এখন বেরিয়ে আসতে চায় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালটে করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী। আর ৪০ হাজারের মতো মেশিন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। আমাদের প্রকল্প থাকলেও সেখানে দক্ষ লোকবলের অভাব ছিল। এছাড়া সংরক্ষণের পরিকল্পনা রাখা হয়নি প্রকল্পে। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় এক্সিট প্ল্যান করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো সংরক্ষণের উপায় খুঁজছে ইসি। তাই ওয়্যারহাউজ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ইসির বিদ্যমান ভবনগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীতে ওয়্যার হাউজের কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে জমি চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য রয়েছে। এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মেশিনগুলোর কী হবে? রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো এভাবে নষ্ট করা যায় না। অনেক সময় স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চাহিদা থাকে। এজন্য আমরা মেশিনগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের কথা ভাবছি। প্রকল্প নেই। সেটার মেয়াদও বাড়েনি। এখন মেশিন সংরক্ষণে টাকা তো লাগবে। আর সেটা সরকারই দেবে। এছাড়া আর কে দেবে? প্রকল্প হোক বা সরকারি তহবিল থেকে হোক... অর্থ তো দেবে। আমরা সে উদ্যোগ নেবো। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনের কথা শুধু চিন্তা করছি না। অনেক অন্যায়, অপকর্ম হয়েছে অতীতে, এগুলো যাতে বন্ধ হয়, নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে কার্যকর হয়, তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে দীর্ঘমেয়াদে শক্ত হয় সেই ব্যবস্থা করবো। তিনি বলেন, ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল যন্ত্র ছিল। এগুলো এখন অকেজো হয়ে গেছে বোধহয়। সবচেয়ে বড় কথা এটার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য এবং আস্থাশীলতা দরকার। রাজনীতিবিদদেরই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভিএমের ব্যবহার সহজ হলেও সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বিতর্কের শীর্ষে ছিল এই ভোটযন্ত্র। জোর করে বোতাম টিপে দেওয়া, নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট সেট রাখা, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, ভোট চলাকালে মেশিন হ্যাং, ডিজিটাল কারচুপিতে ফল পরিবর্তনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই মেশিন ঘিরে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ভোটারদের মাঝেও এই মেশিন নিয়ে রয়েছে অস্বস্তি। এই পরিস্থিতিতে হাজার কোটি টাকার এসব মেশিন একেবারে বাতিল না করে, ব্যবহারের বিকল্প খুঁজছে নির্বাচন কমিশন। তবে বর্তমানে ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মেশিনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রতিমাসের নির্ধারিত সভায় ঘুরেফিরে উঠে আসছে ইভিএম ইস্যু। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বিতর্কিত এই ভোটযন্ত্র জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে চায় না ইসি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধে কয়েক হাজার কোটি টাকার এসব মেশিন বাতিলের খাতায় তোলার পক্ষেও নন তারা। এজন্য স্থানীয় নির্বাচনে চাহিদার প্রেক্ষিতে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করা যেতে পারে কি-না সেটা ভাবতে হবে। এর আগে ২০২৩ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় ৪০ হাজারের মতো মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিনে ধরা পড়ে যান্ত্রিক ত্রুটি। এভাবে মেরামতের জন্য অর্থের যোগানের অভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ইভিএম অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় অকেজো মেশিনগুলো মেরামত ও সংরক্ষণে ১২ কোটি টাকার প্রস্তাব দিলে বৈশ্বিক অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার সেটি নাকচ করে দেয়। সব মিলিয়ে প্রকল্পটি থেকে এখন বেরিয়ে আসতে চায় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালটে করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজার মেশিন ব্যবহার অনুপযোগী। আর ৪০ হাজারের মতো মেশিন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। আমাদের প্রকল্প থাকলেও সেখানে দক্ষ লোকবলের অভাব ছিল। এছাড়া সংরক্ষণের পরিকল্পনা রাখা হয়নি প্রকল্পে। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় এক্সিট প্ল্যান করা হচ্ছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলো সংরক্ষণের উপায় খুঁজছে ইসি। তাই ওয়্যারহাউজ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ইসির বিদ্যমান ভবনগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক ১০টি অঞ্চল তথা ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহীতে ওয়্যার হাউজের কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে জমি চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য রয়েছে। এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মেশিনগুলোর কী হবে? রাষ্ট্রীয় সম্পদ তো এভাবে নষ্ট করা যায় না। অনেক সময় স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চাহিদা থাকে। এজন্য আমরা মেশিনগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের কথা ভাবছি। প্রকল্প নেই। সেটার মেয়াদও বাড়েনি। এখন মেশিন সংরক্ষণে টাকা তো লাগবে। আর সেটা সরকারই দেবে। এছাড়া আর কে দেবে? প্রকল্প হোক বা সরকারি তহবিল থেকে হোক... অর্থ তো দেবে। আমরা সে উদ্যোগ নেবো। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনের কথা শুধু চিন্তা করছি না। অনেক অন্যায়, অপকর্ম হয়েছে অতীতে, এগুলো যাতে বন্ধ হয়, নির্বাচন ব্যবস্থা যাতে কার্যকর হয়, তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে দীর্ঘমেয়াদে শক্ত হয় সেই ব্যবস্থা করবো। তিনি বলেন, ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল যন্ত্র ছিল। এগুলো এখন অকেজো হয়ে গেছে বোধহয়। সবচেয়ে বড় কথা এটার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য এবং আস্থাশীলতা দরকার। রাজনীতিবিদদেরই এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস