বাংলাদেশ

প্রধান বিচারপতির কিছু বক্তব্যের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর দ্বিমত

‘দ্বৈত শাসনের ফলে বিচার বিভাগের কাজে বিঘ্ন ঘটছে’ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য আমি দেখেছি, পড়েছি এবং উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেছি। সবকিছু মিলিয়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী এ কথাগুলো বলেন।

নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরনের নবম বর্ষপূর্তিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাণীতে সোমবার প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। অপরদিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়’।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন ষোড়শ সংশোধনীতে অনুচ্ছেদ ৯৬-কে (বিচারপতি অপসারন ক্ষমতা সংসদের হাতে) ১৯৭২’র সংবিধানে যা ছিল তা হুবহু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সেটি হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে যে আলট্রা ভায়ার্স অব কনস্টিটিউশন। বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এখন বলা হচ্ছে ১১৬ অনুচ্ছেদ বাহাত্তরে যা আছে তাতে ফিরে যেতে হবে। এটা তো স্ব বিরোধী কথা। তিনি বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ ৭২’র সংবিধানে ফিরে যেতে পারলে ৯৬ অনুচ্ছেদে কেন নয়?

তিনি বলেন, ১১৬ অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রপতিকে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন হেড অব দ্য স্টেটস। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ না করে বিচার বিভাগের কোন কিছু পরিবর্তন করেছেন এমন তথ্য আমাদের কারো জানা নেই। যা করা হয়েছে প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। আমি মন্ত্রী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সব সুপারিশ মানার চেষ্টা করি। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সম্পদ। মানুষের শেষ ভরসার স্থল। সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে কোন কিছু করতে হলে আমি অতি সাবধানতা অবলম্বন করি। সুপ্রিম কোর্ট এবং বঙ্গভবনের মধ্যে সেতুর ভূমিকা পালন করে আইন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রী বলেন, বিচার প্রক্রিয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিচার বিভাগের গতিশীলতা আনতে সরকার সব কাজই করবে। সরকারের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই বিচার বিভাগের কাজে সরকার কখনই হস্তক্ষেপ করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় বিশ্বাস করেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তাভেল্লা সিরাজ হত্যা মামলার আসামিকে নিম্ন আদালত জামিন দেয়নি। কিন্তু উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছেন। মাহমুদুর রহমানও জামিন পেয়েছেন। সরকার যদি হস্তক্ষেপ করতো তাহলে এই স্বাধীনতা কি থাকতো বিচার বিভাগের?


এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি