কলাম

তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে ‘বাংলাপোল থেকে ইন্টারপোল’

তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তাকে চাইলেও ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে না।

ব্রিটিশ সরকার যদি বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ অনুযায়ী ইন্টারপোলের কাছে হস্তান্তর করতে চায়, তাহলে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ আইনের আর্টিকেল ২, ৩ ও ৬ ধারা পরিবর্তন করতে হবে, যা কখনোই সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি, বহিঃসমর্পণ চুক্তি বা অপরাধী বিনিময় চুক্তি রয়েছে শুধু সেসব দেশ থেকেই অপরাধীকে ফেরত পাঠান যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এ ধরনের কোন চুক্তি নেই। ফলে তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনারও কোন ধরনের সুযোগ নেই। বরং উল্টো ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব তার জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করা।

১৯৪৮ সালের সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের ১৪নং অনুচ্ছেদ মতে বিশ্বের সব মানুষের নিজ দেশের সরকারের নির্যাতন বা নিগ্রহ থেকে বাঁচতে অন্য কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের সব দেশই এই আইনে স্বাক্ষরদাতা। তাছাড়া কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল এবং ১৯৫১ সনের শরণার্থী কনভেনশন মতে এরূপ নিগৃহীত ভীত কোন ব্যক্তিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেশে ফেরত পাঠান যাবে না। সেই সঙ্গে যদি কোন ব্যক্তির তার দেশের বিচারে মৃত্যুদণ্ড শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা থাকে, ব্রিটেন সেই আশ্রয়প্রাপ্তকে ফেরত পাঠাতে পারবে না। তাই তারেক রহমানকে ব্রিটেন থেকে ফেরত দেয়াটা অনেকটাই অসম্ভব।

আসলে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবেই ইন্টারপোলের ভয় দেখাচ্ছে সরকার। যদিও এপর্যন্ত বাংলাদেশী ৫৭ নাগরিকের বিরুদ্ধে মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি থাকলেও তাদের কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি সরকার। অথচ আদালত দ্বারা এখনও সাজাপ্রাপ্ত না হওয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। সরকারের আসল উদ্দেশ্য ফিরিয়ে আনা নয়। বরং তারেক রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাকে কলংকিত হিসেবে দেখান। সরকার আমাদের পুলিশ বাহিনীকে যেভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, এবার ইন্টারপোলকেও একইভাবে ব্যবহার করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। যদিও এটা করা কখনোই সম্ভবপর নয়।

আমরা আমাদের নেতাদের সব অপকর্ম ও দুর্নীতির বিচার চাই। রাষ্ট্রের কোষাগার লুট করে আর গরিব মানুষের টাকা ছিনতাই করে রাজনীতির এই ভয়াবহ রাজনৈতিক-অর্থনীতির ধ্বংস চাই। এদেশে সরকারি কমিটি করে রাজনৈতিক বিবেচনায় হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়, এমনকি ফাঁসি হলেও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে মাফ পাওয়া যায়। এরূপ অপসংস্কৃতির অবসান আমাদের কাম্য হলেও এ থেকে সহসা মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। যেসব দুর্নীতির মামলায় তারেক জিয়ার বিচার হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধেও একই রকমের হাজার হাজার মামলা ছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসেই নিজেদের বিরুদ্ধে করা সাড়ে সাত হাজারের বেশি এরকম মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিরোধী দলের কারও মামলা প্রত্যাহার করা তো দূরের কথা উল্টা নতুন নতুন মামলা দিয়ে তাদের জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা পরিচালনার কোন নৈতিক অধিকার এই সরকারের থাকা সঙ্গত নয়। বাংলা পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলকে নির্যাতন করা সম্ভব হলেও ইন্টারপোলকে দিয়ে সেই কাজ করান কখনই সম্ভব নয়। এটা হয়তো সরকারও জানে।

লেখক : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ।।