কলাম

ওরা বাংলাভাষার অবমাননা করেছে

একজন নারীকে চরিত্রহীন বলায় ব্যারিষ্টার মঈনুলকে আটক করা, বাংলাভাষার সুস্পষ্ট অবমাননা। ব্যারিষ্টার মঈনুল টকশোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির বিব্রতকর প্রশ্নে তাকে চরিত্রহীন বলতে চেয়েছেন। তাকে চরিত্রহীনা বলেননি। চরিত্রহীন শব্দটি পুংলিঙ্গবাচক আর মাসুদা ভাট্টি স্ত্রীবাচক এবং বাস্তবেও একজন ভদ্র মহিলা। চরিত্রহীন শব্দটি সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে বেপরোয়া আচরণ ও সাংবাদিকতা পেশা বুঝাতে তাঁর ক্ষেত্রেও পুংলিঙ্গবাচক (চরিত্রহীন) শব্দ ব্যবহার করা যায়। ব্যারিষ্টার মঈনুল তাই করেছেন। তিনি বাংলা ভাষায় মোটেও অজ্ঞ নন। তিনি মাসুদা ভাট্টির নারীত্ব বুঝালে, অবশ্যই চরিত্রহীনা বলতেন। টকশোর ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি ব্যারিষ্টার মঈনুলকে আপত্তিকর প্রশ্নে বিব্রত করার চেষ্টা করেন। প্রত্যুত্তরে ব্যারিষ্টার মঈনুল বলেন, ‘দুঃসাহসের জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’ টকশোর শেষ পর্যায়ে সাংবাদিক মাসুদা উক্ত শব্দ নিয়ে আপত্তি করলে ব্যারিষ্টার মঈনুল বিস্মিত হন এবং জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কাকে চরিত্রহীন বলছেন? অর্থাৎ ব্যারিষ্টার মঈনুল চরিত্রহীন শব্দ দ্বারা সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বা তাঁর নারীত্ব বুঝাননি। তিনি নারীত্ব বুঝালে, অবশ্যই চরিত্রহীনা বলতেন।

অনেকে বলেন, বাংলা ভাষায় লিঙ্গান্তর আবশ্যক নয়। তাই সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায়, তাতে নারী জাতির অবমাননা হয়েছে। এবিষয়টি শুধুমাত্র বিশেষ্য ও পদবিবাচক শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন- প্রধানমন্ত্রী, সচিব, অধ্যক্ষ ইত্যাদি। এসমস্ত শব্দে স্ত্রীলিঙ্গ আবশ্যক নয়। এছাড়া বিশেষণ বা গুণবাচক শব্দে লিঙ্গান্তর একান্তই আবশ্যক। যেমন, যদি বলা হতো ব্যারিষ্টার মঈনুল অসতী বা চরিত্রহীনা পুরুষ। এটি কি সঠিক হতো? এতে কি পুরুষ জাতির অবমাননা হত? কখনোই নয়। ঠিক এভাবে মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় তাঁর নারীত্ব বুঝায়না। এতে নারী জাতির অবমাননা হয়না। মূলত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও নারীসমাজ বাংলাভাষা তেমন বোঝেননা। তারা সম্পুর্ণ অজ্ঞতাবশত ব্যারিষ্টার মঈনুলের বিরূদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের এ অজ্ঞতায় বাংলাভাষার অবমাননা হয়েছে। আরো কলঙ্ক বেড়েছে, এদেশের বিচারকদের ভাষাগত অজ্ঞতার ফলে। বিচারকদের উচিত ছিল, বিষয়টি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা। তারা কিভাবে চরিত্রহীন শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ বিবেচনা করলেন এবং ব্যারিষ্টার মঈনুলকে আটকের আদেশ দিলেন? হয়তো উক্ত বিচারকগণ বিশেষ কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। এটি দেশ ও জাতির জন্য চরম লজ্জার।

টকশোতে মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলায় যে নারীগণ ব্যারিষ্টার মঈনুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারা আদৌ জানেননা, চরিত্রহীন শব্দটি কোন লিঙ্গের? তবু তাদের আঁতে ঘা লাগল কেন? টকশোর মতো কথার বাজারে একটিমাত্র (চরিত্রহীন) শব্দের জন্য তারা এতো ক্ষুব্ধ কেন? এ একটি শব্দের জন্য ব্যারিষ্টার মঈনুল আটক আছেন এবং বহু মামলা মোকাবেলা করছেন। অথচ প্রবাসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির বিরূদ্ধে আরো জঘন্য ভাষায় লিখেছেন। তবু তাঁর বিরূদ্ধে মামলা হয়নি কেন? বিষয়টি সংশয়ের। প্রকৃতপক্ষে যে সকল নারী চরিত্রহীন শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ বিবেচনা করেছেন, ওরা নারী জাতির কলঙ্ক। ওরা ওদের কলঙ্ক বাংলাভাষাতেও লেপন করতে চায়।

বাংলাদেশে বাংলাভাষার এমন পন্ডিত নেই, যারা আলোচ্য অবমাননার প্রতিবাদ করবে। তাই বাংলা ভাষাভাষী সকল নাগরিকের কাছে আবেদন- আপনারাই বিবেচনা করুন, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির ক্ষেত্রে চরিত্রহীন শব্দটি প্রযোজ্য কিনা? চরিত্রহীন শব্দের দ্বারা নারী জাতির অবমাননা হয় কিনা? চরিত্রহীন শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ হলে, এর পুংলিঙ্গ কি হবে? এবিষয়ে ব্যারিষ্টার মঈনুলকে আটক করা বৈধ কিনা? এ জঘন্য ঘটনা বাংলা ভাষার অবমাননা কিনা? যারা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা বাংলার অবমাননা করেছে, তাদের শাস্তি কি? ওদেরকে শাস্তি না দিলে, ওরা বাংলাভাষার অবমাননা করতেই থাকবে। ফলে, আমরা আমাদের মাতৃভাষার ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সবই হারাবো।