‘শনিবার বিকেল’র জন্মলগ্ন থেকে জুড়ে আছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। কারণ যিনি (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) এটি নির্মাণ করেছেন, তিনি অভিনেত্রীর জীবনসঙ্গী। আবার এতে অভিনয়ও করেছেন তিশা। ফলে তাদের যৌথজীবনের সদস্যের মতোই বেড়ে ওঠে এই ছবি। গেলো ১০ মার্চ এটি মুক্তি পেয়েছে। না, দেশের প্রেক্ষাগৃহে নয়, ১২ হাজার কিলোমিটার দূরের উত্তর আমেরিকায়।
প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৭১টি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। সময় স্বল্পতায় সেভাবে প্রচারণাও চালাতে পারেনি ছবির টিম। তাই ইলেভেন্থ আওয়ারে মার্কিন মুলুকে হাজির হন ফারুকী। হলে হলে গিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করছেন। ছবি দেখার পর অধিকাংশ দর্শকই ইতিবাচক মন্তব্যে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নির্মাতা ও শিল্পীদের। ফলে আনন্দ-আবেগে আপ্লুত হচ্ছেন ফারুকী।
আমেরিকার সেই প্রশংসা আনন্দের উপলক্ষ হয়ে কড়া নাড়ছে ঢাকার তিশার দরজায়ও। কারণ তিনি এই সফরে তিনি ফারুকীর সঙ্গে হতে পারেননি। সেজন্য দেশে থেকেই ছবির খবরাখবর রাখছেন। আর তার অনুভূতির খবর জানতে চেষ্টা করেছে বাংলা ট্রিবিউন। প্রথমেই জানতে চাওয়া হয় দর্শকের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তিশা বললেন, ‘নিউইয়র্কের প্রত্যেকটা শো খুব ভালো যাচ্ছে। এছাড়া ওয়াশিংটন ডিসিতেও সরয়ার গিয়েছিলো, সেখানেও ভালো হচ্ছে। আর কানাডাতে আমাদের প্রত্যাশা যেমন ছিলো, তেমনই যাচ্ছে। ওখানেও তো আমাদের বাঙালি ভাই-বোনেরা আছেন। আমরা আসলে প্রথমে ভয়েই ছিলাম কেমন যাবে। তবে আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও ভালো যাচ্ছে ছবিটা।’
দেশের আগে বিদেশে, তাও প্রায় প্রচারণাহীন মুক্তি পেলো ‘শনিবার বিকেল’। তবু দর্শক ছবিটি দেখছেন। এ বিষয়ে আনন্দ প্রকাশ করে তিশা বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনও ছবি মুক্তি পেলে অন্যান্য দেশে থাকা বাঙালিরাও সেটার খবর পান, এরপর বিদেশে মুক্তি পায়; ওই সিনেমার প্রচারণা এক ধরণের। আর আমাদের ছবিটা প্রথমেই বাইরে মুক্তি পেয়েছে, প্রবাসী ভাই-বোনেরা দেখছেন, এটা আরেক ধরনের। কিন্তু আমার মনে হয়, বাংলাদেশি মানুষ পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, দেশের খবরাখবর রাখেন। সুতরাং আমাদের খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি। তারা নিজ দায়িত্বে আসছেন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আসছেন এবং ছবিটা দেখে প্রশংসা করছেন; এসব দেখে আমরা অনেক আনন্দিত।’
শুধু জীবন নয়, ফারুকীর প্রায় ছায়াসঙ্গী তিশা। দেশ-বিদেশের প্রায় সব সফরেই তারা একসঙ্গে যান। কিন্তু এবার ফারুকী একাই গেছেন আমেরিকায়। নিজের যুক্ত হতে না পারার কারণ তিশা এভাবে জানালেন, ‘এখন তো আমার জীবনটা আগের মতো না যে, প্ল্যান হলো আর হুট করে চলে গেলাম। আমার সঙ্গে এখন আরেকটা জীবন জড়িত, ইলহাম; তার বয়স অতো বেশিও হয়নি। এটা যদি ১৫-২০ দিনের ট্যুর হতো, তাহলে ইলহামকে নিয়ে আমিও যেতাম। কিন্তু এটা যেহেতু খুব শর্ট ট্রিপ, ওখানে আবার মাইনাস তাপমাত্রা চলছে; এখানকার গরম থেকে ওখানে গেলে ওর শরীরটা খারাপ করতো। এছাড়া আমার মা-ও একটু অসুস্থ। সবকিছু মিলিয়ে আর সাহস করলাম না।’
‘শনিবার বিকেল’-এ তিশার চরিত্রটি কেমন, এটি ঘিরে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন? এ প্রশ্নে রহস্য জিইয়ে রাখলেন অভিনেত্রী। তার ভাষ্য, ‘চরিত্রটি নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাই না। আমি আশাবাদী যে, বাংলাদেশের মানুষ একসময় ছবিটা দেখতে পারবে। তখন প্রত্যেকটা চরিত্র সম্পর্কেই জানতে পারবে। তবে এতটুকু বলবো যে, প্রথম ছবি মুক্তির সময় মানুষ অনেক নেতিবাচক কথা বলেছিলো। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর এখন সবাই প্রশংসা করছেন। সুতরাং পুরো ছবি না দেখে কোনও চরিত্র বিচার করার দরকার নেই। তাই আমিও অপেক্ষা করছি, যখন দেশের হলে সিনেমাটি আসবে তখন আমার বা জাহিদ ভাই কিংবা অন্যদের চরিত্র, সবই জানতে পারবেন দর্শকরা। আর বিদেশে মুক্তির পর দর্শক কী বলছেন, তা সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটলেই বোঝা যায়। আমি নিজ থেকে কিছু না বলি।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। এতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, নাদের চৌধুরী, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ভারতের পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ। ছবিটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া ও ছবিয়াল এবং জার্মানির ট্যান্ডেম প্রোডাকশন। ভারতের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছবিটি পরিবেশনা করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড (সিইপিএল)।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস