বিনোদন

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফৈরদৌস ইবনে হকের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেয় আদালত। একইসঙ্গে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রমনা মডেল থানা পুলিশকে। আবিদ হাসান বলেন, সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোকক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয়, তা উঠে আসে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। তিনি বলেন, সবশেষ পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতি আদেশ দেন। আজ আদালত সেই আদেশ রহিত করেন। একইসঙ্গে কমর উদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছরে মারা যান সালমান শাহ। অভিনেতার হঠাৎ মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে দাবি করেন তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হক। যা মেনে নেয়নি নায়কের পরিবার। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলা করেন সালমানের বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সিআইডির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর সিএমএম আদালত সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে রায় দেন। যা প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন সালমানের বাবা। ২০০৩ সালে রিভিশন মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক প্রতিবেদন দাখিল করেন যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে ‘অপমৃত্যু’ বলা হয়। এরপর ছেলের মৃত্যুর বিচারপ্রার্থী কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী মারা গেলে মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ২০১৫ সালে তিনি সিএমএম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন। তখন মামলাটি তদন্তের ভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। মামলার নিষ্পত্তি আদেশের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করে বাদীপক্ষ। ওই রিভিশন মামলায় বলা হয়, একাধিক ব্যক্তির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে হত্যাকে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিত হত্যাকে ‘আত্মহত্যা’ ও ‘অপমৃত্যু’ বলা হচ্ছে। তাই সত্য প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সালমান শাহর প্রকৃত নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। ক্যারিয়ারের শুরুতে ছোটপর্দায় ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সহ একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। তার অভিনীত সবশেষ সিনেমা ছিল ‘বুকের ভেতর আগুন’। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি সর্বাধিক ১৩টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি হিসেবে পরিচিত।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস