ফিচার

যেখানে মানুষ বেশিদিন বাঁচে

ইতালির উত্তরে পাহাড়েঘেরা গার্ডা হ্রদ এখন নানা দেশের পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ। অথচ এক সময় এমনটা ছিল না। বংশগত বিশেষ জিনের কারণে এখানকার অনেক মানুষ দীর্ঘজীবী হন। গার্ডা লেকের আয়তন প্রায় ৩৭০ বর্গকিলোমিটার। এখানকার অন্যতম পরিচিত শহরের নাম লিমোনে সুল গার্ডা। গত শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত শুধু নৌকায় চেপে জেলেদের এই গ্রামে যাওয়া যেত। এখন যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়েছে।

লিমোনে শহরের বয়স্ক অনেক মানুষ এখানে পর্যটকদের প্রথম ঢলের কথা এখনও মনে করতে পারেন। তাদের কাছেই জানা যায়, ১৯৩২ সালে মুসোলিনি যখন গার্ডেসেনা নামের পাড়ের রাস্তা তৈরি করিয়েছিলেন তখনই পর্যটনের উন্নতি শুরু হয়। আগে যেখানে লেবুর বাগান ছিল সেখানে হোটেল তৈরি শুরু হয় পঞ্চাশের দশকে। লিমোনে সুল গার্ডা নাকি পৃথিবীর উত্তরতম প্রান্ত। এখানে লেবু জন্মায়। কিছু প্রাচীন লেবুগাছের ঝোপ এখনও দেখা যায়। লেবু ছাড়াও এখানের আকর্ষণ হ্রদের মাছ। ভোর থেকেই নানা রকমের মাছ ধরা হয়। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিশেষ এক জিন শনাক্ত করা হয়, যা তাদের দীর্ঘ আয়ুর কারণ।

গার্ডা লেকের উত্তর প্রান্তে অতিথিরা আজ আর শুধু তরুণ ইতালীয়দের টানে আসেন না। বিশেষ ধরনের বাতাসের কারণে হ্রদটি সার্ফার ও নৌকাচালকদের স্বর্গ হয়ে উঠেছে। ক্যাবল কারে চেপে লেকের অপর প্রান্তে মন্টে বালডো পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়। বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রিজ বা ঢাল দেখতে আসেন। বাতাস কাজে লাগিয়ে অনেকে প্যারাগ্লাইডিং করেন।

পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে রয়েছে ক্যাবল কার কোম্পানি। এই ক্যাবল কার ইউরোপের অন্যতম সুন্দর গার্ডা লেক থেকে প্রায় এক হাজার ৮০০ মিটার উঁচুতে মন্টে বাল্ডোয় যায়। সেখানে রয়েছে মন্টে বাল্ডোর ইউরোপীয় বাগান। মন্টে বাল্ডো পাহাড়ের পাদদেশে মালচেসিনে শহর। লিমোনে সুল গার্ডার পরেই উত্তর পাড়ের অন্যতম পরিচিত শহর। মধ্যযুগীয় ছোট্ট শহরটিকে ‘গার্ডা লেকের মুক্তো’ বলা হয়।

বিখ্যাত জার্মান কবি ও সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে অষ্টাদশ শতাব্দীতেই তার ‘ইতালি ভ্রমণ’ বইয়ে শহরটিকে অমর করে দিয়েছেন। মালচেসিনে শহরের মাঝে চতুর্দশ শতাব্দীর স্কালিগার কেল্লায় গোটা এলাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথম জার্মান পর্যটক হিসেবে সেখানে গ্যোটের জন্য আলাদা ফলক শোভা পাচ্ছে। গ্যোটের ভ্রমণ সম্পর্কে জানা যায়, তখন ক্যামেরা ছিল না। তাই তিনি এঁকেছেন, স্কেচ তৈরি করেছেন।

লোকে ভেবেছিল, তিনি একজন গুপ্তচর এবং তাকে কেল্লার কারাগারে পুরে দিতে চেয়েছিল। মালচেসিনে শহরের একজন মানুষ জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করেছিলেন। তিনিই লোকজনকে জানান, গ্যোটে অত্যন্ত বিখ্যাত এক কবি। তখন তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মালচেসিনে শহরে সন্ধ্যা নামলে এক জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর টানেই শত শত বছর ধরে মানুষ এখানে আসছেন।