আন্তর্জাতিক

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নাকি গরু ?

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নাকি গরু ? ভারতে গরুর জীবনের
মূল্য কি একজন মুসলিমের জীবনের
চেয়েও বেশি? সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর
হলো-হ্যাঁ । এ বছরেই সেপ্টেম্বর মাস
থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা
বিশ্লেষণ করলেই এর সপক্ষে প্রমাণ
পাওয়া যাবে। সেপ্টেম্বরের শেষের
দিকে উত্তর প্রদেশের দাদরি শহরে
লোমহর্ষক হত্যাকা-ের শিকার ৫০ বছর
বয়সী মোহাম্মদ আখলাকের অপরাধ ছিল
গরুর গোশত খাওয়া ও সংরক্ষণ করা। পরে
প্রমাণ হয় তার বাসায় গরুর গোশত ছিল
না। ২০১৪ সালের আগস্টে উত্তর ভারতে
একজন মুসলিম যুবককে উগ্রবাদী হিন্দুরা
নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, তার
অপরাধ সে গরু জবাই করেছিল। এ বছরেই
মার্চে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা
যায় একজন মুসলিম যুবককে গরু
কেনাবেচার অপরাধে দড়িতে ঝুলিয়ে
পিটিয়ে হিন্দু রামগীতি বলতে বাধ্য করা
হয়েছে। উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মধ্যে
আখলাকের হত্যাকা-টি সবচেয়ে
মর্মস্পর্শী। ক্ষমতাসীন বিজেপির
ইউনিয়ন মন্ত্রী প্রভাবশালী মহেশ শর্মা
এ হত্যাকা-কে দুর্ঘটনা বলেছেন। কিন্তু
প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল হত্যাকা-। এই
হত্যায় অংশ নেয়া উগ্রবাদী হিন্দুরা
আখলাকের বাড়িতে হামলা করে এবং
পরিবারের সবার সামনেই তার স্ত্রীর
সেলাই মেশিন দিয়ে মাথা থেতলে
তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় জড়িত গরু
রক্ষা করি নামক সংগঠনটির এক সদস্য ও
স্থানীয় বিজেপি নেতা ইন্দার নাগার
বলেন, আমরা গরুকে আমাদের সন্তানের
চেয়েও বেশি ভালবাসি। হিন্দুদের কাছে
গরু দেবতা। তাই ভারতে গরু হত্যা ও
গোশত ভক্ষণ দুটোই নিষিদ্ধ। সম্প্রতি এক
বক্তৃতায় মোদি বলেন, গরু নিধন
সর্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু ২০১৪
সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি
কখনোই মুসলিম হত্যার ব্যাপারে মুখ
খোলেননি। মোদির রাজনৈতিক আনুগত্য
পরিষ্কারভাবে বোধগম্য। তিনি এক
দশকের বেশি সময় ধরে হিন্দুত্ববাদী
সংগঠন আরএসএস-এর সাথে জড়িত
ছিলেন, যাদের প্রধান এজেন্ডাই হলো
১২৫ কোটি মানুষের দেশকে, যাদের
একটি উল্লেখযোগ্য অংশই মুসলিম,
পুরোপুরি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা।
১৯৮৫ সালে মোদি হিন্দু মৌলবাদী
গ্রুপের রাজনৈতিক শাখা বিজেপিতে
যোগদান করেন।২০১৪ সালে নির্বাচিত
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির
কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞরা মনে
করেছিলেন তিনি রাজনৈতিক আদর্শের
ঊর্ধ্বে উঠে অর্থনৈতিকভাবে
স্বাবলম্বী, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গঠনেই
বেশি আগ্রহী হবেন। তবে অচিরেই
তাদের সে ভুল ভাঙে। ভারতবর্ষের
ইতিহাসে সংগঠিত এ যাবতকালের
সবচেয়ে প্রাণঘাতী গুজরাট দাঙ্গায়
নিহত কমপক্ষে ১০০০ মুসলিমের রক্তে যার
হাত রঞ্জিত সেই নরেন্দ্র মোদি তার
সারাজীবনের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা
থেকে একটুও বিচ্যুত হননি। ভারতকে হিন্দু
রাষ্ট্র বানানোই সম্ভবত তার ও তার
দলের প্রধান লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জনে
তারা যে এখন পর্যন্ত সফল সে ব্যাপারে
মোদির ঘোর শত্রুও যে দ্বিমত করবে না-
তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অনেক
ভারতীয়ই বলছেন, মোদি আখলাকের
মৃত্যুতে সমবেদনাও জানাননি। তাহলে কি
মোদি আখলাকের খুনীদের প্রতি
সমব্যথী?২০০৩ সালে মোদি বলেছিলেন,
গুজরাটের প্রধান শক্তিই হলো এর
নিরামিষভোজী হিন্দুরা। ফরেন
পলিসিতে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে।
ওয়েবসাইট।