ইউক্রেনে আবারও জোরালো আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া। দেশটির কয়েকটি অঞ্চলের দিকে আবারও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। এ জন্য তারা শহরগুলোর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ট্যাঙ্ক, মর্টার ও কামান থেকে গোলা ছুড়ছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তাঁরা পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে তুষারের মধ্যেই তীব্র সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কেও অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে রুশ বাহিনী। ইতোমধ্যে বাখমুত ও নিকটবর্তী সোলেদার, ওপুয়েৎনেত, ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান ও আঞ্চলিক রাজধানী খেরসন লক্ষ্য করে মস্কো গোলাবর্ষণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ। এর আগে রুশরা খেরসন ছেড়ে দিলে ইউক্রেন নগরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলেও হামলা চালানো হচ্ছে বলে দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলেনস্কি বলেছেন, আমরা দখলদারদের উদ্দেশে বিশ্নেষণ করে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে আগের চেয়ে ভয়াবহ।
এদিকে রুশদের হামলায় দেশটির প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের ডিটিএকে কোম্পানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃতিতে গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ রাশিয়ান হামলার এক সপ্তাহ পরও ইউক্রেনের লাখ লাখ বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন রয়েছেন। কারণ রুশদের হামলায় তাঁদের ৪০ শতাংশ জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন কর্মী হতাহত হয়েছেন। স্থলপথে অপমানজনকভাবে পিছু হটতে বাধ্য হয়ে রুশরা অক্টোবর থেকে আকাশ পথে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করে। এতে দেশটির লাখ লাখ বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। ফলে তীব্র শীতের মধ্যে বেশ অসুবিধায় পড়েছেন ইউক্রেনীয়রা। ডিটিএকে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে তাদের প্রকৌশলীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। ইতোমধ্যে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে একটু উষ্ণতার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৯ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতে জানিয়েছে, জ্বালানি অবকাঠামোগুলোতে ক্রমাগত রাশিয়ার নির্বিচার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক মানবিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে মস্কোর এমন নীতির কার্যকারিতা সম্ভবত ভোঁতা হয়ে গেছে। রাশিয়ার ওপর আবারও নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় যাতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়, সেজন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, আমি ইইউকে তার অব্যাহত প্রতিরক্ষা সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত। এদিকে মস্কোর ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে সুইজারল্যান্ড। গতকাল দেশটি জানিয়েছে, ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা এই সম্পদ জব্দ করেছে। অন্য দিকে নিন্দার পর ইলন মাস্ককে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। এর সমালোচনা করেছিলেন জেলেনস্কি। এবার মাস্ককে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন সফরের আহ্বান জানান তিনি।
অক্টোবর মাসে এক টুইটারে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার এক শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেন। সেখানে তিনি ক্রিমিয়াকে রুশ অঞ্চল বলে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসের একটি আয়োজনে এ বিষয়ে আবারও ইলন মাস্কের নিন্দা করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। রাশিয়া কী করেছে তা বুঝতে চাইলে আপনাকে ইউক্রেনে আসতে হবে।