আন্তর্জাতিক

ইরানকে পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র

তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তির লক্ষ্যে ইরানের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজ গতকাল শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানান, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি তেহরান সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত চুক্তির কিছু বিষয় তার কাছে তুলে ধরেছেন। এই খবরটি এসেছে এমন এক সময়, যখন জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা জানায়, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম মজুত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের কাছে বর্তমানে ৪০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম আছে যা ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়াম। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লিয়াভিট জানান, এই পরিস্থিতিতে চুক্তিটি মেনে নেওয়াই হবে ইরানের জন্য ‘সর্বোত্তম পথ’। তার ভাষায়, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা অর্জন করতে পারবে না।' তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে ইরানের কাছে একটি বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে সেই প্রস্তাবের পূর্ণ বিবরণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে আরাঘচি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেন, 'জাতীয় নীতি, স্বার্থ এবং জনগণের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।' আইএইএ’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান যে মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে তা বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গবেষণার প্রয়োজনীয় মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এই ইউরেনিয়াম আরও পরিশোধন করা হলে তা দিয়ে ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
বিশ্লেষকদের মতে, পারমাণবিক অস্ত্র না থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইরানই একমাত্র, যারা এত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি আইএইএ বোর্ড অব গভর্নরসে ইরানের বিরুদ্ধে অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার প্রস্তুতি নিতে পারে। কিন্তু ইরান বরাবরই তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শনিবার আইএইএ’র প্রতিবেদনকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং ‘ভিত্তিহীন অভিযোগে ভরা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি আইএইএ গভর্নর বোর্ডে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, কিন্তু তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। গত এপ্রিল থেকে ওমানের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও দুই পক্ষ আশাবাদী, তবু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দ্বিমত রয়ে গেছে। এর মধ্যে একটি হলো, ভবিষ্যত চুক্তির অধীনে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যেতে পারবে কি না। এই আলোচনা চলার মধ্যেও ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচির গতি কমিয়েছে বলে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং আইএইএ জানান, ইরান প্রতি মাসে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগী পরিমাণ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়, তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা সেটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। যদিও ইরান এ ধরনের সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এছাড়া, দেশটি আইএইএ’র সিনিয়র পরিদর্শকদের দীর্ঘদিন ধরে পরিদর্শনের সুযোগ দেয়নি এবং সংস্থার একাধিক প্রশ্নের উত্তরও দেয়নি। এর আগে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই চুক্তির আওতায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত ও পর্যবেক্ষণাধীন রাখার শর্তে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প সেই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে বাতিল করেন। তার মতে, এতে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চুক্তি বাতিলের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি আরও জোরদার করেছে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, ট্রাম্প এর আগেও ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। বর্তমানে পরিস্থিতি আবারো নতুন একটি চুক্তির সম্ভাবনার দিকে এগোচ্ছে, যদিও এখনও তা নিশ্চিত নয়।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস