রোমানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থানরত তাদের কিছু সেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুখারেস্ট জানিয়েছে, দেশটিতে এখন ৯০০ থেকে ১,০০০ জন মার্কিন সেনা থাকবে, যা আগে ছিল প্রায় ১,৭০০ জন। মন্ত্রণালয় বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অগ্রাধিকার নীতির অংশ হিসেবে এই সেনা পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা পূর্ব থেকেই প্রত্যাশিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) জানিয়েছে, এটি ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহার বা ন্যাটো জোট ও এর অনুচ্ছেদ ৫–এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি হ্রাসের কোনো সংকেত নয়। ন্যাটো চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো তার প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে—যা দীর্ঘদিন ধরে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রধান প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত।
রোমানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আয়োনুত মোস্তেয়ানু জানান, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি ইউরোপীয় মিত্রদের জানিয়েছেন যে, তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার প্রতি আরও মনোযোগ দিতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, রোমানিয়ার মিহাই কোগালনিচানু বিমানঘাঁটিতে অবস্থানরত একটি মার্কিন ব্রিগেডকে ঘুরিয়ে নেওয়া হবে এবং সেটি আর প্রতিস্থাপিত হবে না।
মোস্তেয়ানু বলেন, এই ব্রিগেডের কিছু ইউনিট বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে অবস্থান করছে, তবে এসব দেশ থেকেও সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াদিস্লাভ কোসিনিয়াক-কামিশ জানিয়েছেন, তাদের দেশে মার্কিন সেনা কমানো নিয়ে কোনো তথ্য পোল্যান্ড পায়নি। তবে রোমানিয়ার দেবেসেলু ও কাম্পিয়া তুরজির মার্কিন ঘাঁটিতে সেনা উপস্থিতি অপরিবর্তিত থাকবে।
এ বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অগ্রাধিকার ইউরোপ থেকে সরিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দিকে নিতে চান। পাশাপাশি তিনি ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের নিজেদের প্রতিরক্ষা দায়িত্ব আরও বেশি করে গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে রোমানিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই ঘোষণা পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এসব দেশ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে শঙ্কিত।
বুখারেস্টের ঘোষণার পরপরই ন্যাটোর এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটোর প্রতি অঙ্গীকার “অটল” রয়েছে এবং এ ধরনের সমন্বয় “অস্বাভাবিক নয়”। তিনি আরও জানান, “এই সামান্য পরিবর্তনের পরও ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।”
পেন্টাগনও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপজুড়ে “শক্তিশালী উপস্থিতি” বজায় রাখবে এবং প্রয়োজনে দ্রুত সেনা ও সামরিক সক্ষমতা মোতায়েন করতে পারবে, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ন্যাটো মিত্রদের রক্ষার প্রতিশ্রুতিও অন্তর্ভুক্ত। বর্তমানে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ লাখ সেনা অবস্থান করছে।
এর আগে গত মাসে ন্যাটো “ইস্টার্ন সেন্ট্রি” নামে একটি নতুন মিশনের ঘোষণা দেয়, যা পূর্ব সীমান্তে জোটের নজরদারি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করবে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় তখন, যখন ডজনখানেক রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করে—যা ২০২২ সালের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। কয়েক দিন পর রোমানিয়া জানায়, একটি রুশ ড্রোন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে, এবং এস্তোনিয়াও অভিযোগ করে যে রুশ যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম