আন্তর্জাতিক

উত্তর কর্দোফানে সহিংসতার ভয়াবহতা, হাজারো মানুষ স্থানত্যাগে বাধ্য

সুদানের উত্তর কর্দোফান রাজ্যে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বেসামরিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় অঞ্চলটি দ্রুত ‘অবনতির’ দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক। সংস্থাটির শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) প্রকাশিত মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে আরএসএফের দখলে যাওয়া বারা এলাকা থেকে প্রায় ৪,৫০০ মানুষ পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ২,০০০ জন রাজ্যের রাজধানী এল-ওবাইদে পৌঁছাতে পেরেছে। বাকিরা পথে আটকে আছে, তারা খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটে ভুগছে। বারা শহরটি দীর্ঘদিন ধরে সরকার–সমর্থিত সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) ও আরএসএফের লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। জুলাইয়ে আরএসএফের এক হামলায় নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরে এলাকা পুনর্দখল করেছিল এসএএফ, কিন্তু গত সপ্তাহে তা ফের আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে যায়। এলাকার পশ্চিমে অবস্থিত উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশারেও আরএসএফের বর্বরতা বেড়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ১,৫০০ মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ ও সংক্ষিপ্ত বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ পালানোর চেষ্টা করলেও অনেকে এখনও শহরে আটকা রয়েছে।
আল জাজিরার যাচাই করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা নিরস্ত্র যুবকদের হত্যা করছে এবং মৃতদেহের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এল-ফাশারে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ উত্তর কর্দোফানেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সুদান–বিশেষজ্ঞ বাকরি এলজ্যাক বলেন, ‘আরএসএফ এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ না নেয়, এই সহিংসতা এখানেই থামবে না।’ আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালো বলেছেন, তার বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা খুবই কম। ২০২৩ সালে আরএসএফ ও এসএএফের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটগুলোর একটি। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে আফ্রিকা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মার্থা পোবি বলেন, ‘উত্তর কর্দোফানে সংঘাতের প্রসার এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোয় এক বিপজ্জনক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’ সূত্র/ আল-জাজিরা