আন্তর্জাতিক

তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান বিশ্বে ‘রোলমডেল’

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ‘কোনোকালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে- শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ক্যারিশম্যাটিক লিডার ও লৌহমানব তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। এই ক্যারিশম্যাটিক লিডার হয়ে উঠার পেছনে যার নিরন্তর প্রেরণা রয়েছে- তিনি আর কেউ নন, আরব বংশোদ্ভূত ফার্স্ট লেডি এমিনি গুলবারান এরদোগান।

শুধু এরদোগান নিজেই কি ব্যাপক জনপ্রিয়? না, সেই সাথে ৬০ বছর বয়সি ফার্স্ট লেডি এমিনি গুলবারান এরদোগানও বিশ্বের জনপ্রিয়।

এমিনি এরাদোগান বিশ্বজুড়ে আলোচিত ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ‘রোলমডেল’। এককথায় পথিকৃৎ।

শুধু নিজের দেশ তুরস্কে নয়, যেখানে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবতা সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। সূদুর ইউরোপ থেকে ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে চলে এসেছিলেন মিয়ানমারের আরাকানে।

তুরস্কের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ দাভুতোগলুকে সঙ্গে নিয়ে চরম বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নিয়েছেন, নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

এছাড়া তুরস্কে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার নারী ও শিশুদের সম্মানে ইফতার ও ডিনারের আয়োজন করেছেন ফার্স্ট লেডি এমিনি।

মক্কা থেকে রাসুল (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাস টেনে এসময় তিনি শরণার্থীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘তোমরা কেউ গৃহহীন নও, আমাদের দেশ তোমাদেরও দেশ, তোমাদের দ্বিতীয় মাতৃভূমিতে তোমাদের স্বাগতম’

২০১০ সালে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে পাকিস্তান সফরে আসেন এমিনি এরদোগান। ভয়াবহ সে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি।

নিজ দেশ তুরস্কে তাদের সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন এমিনি এবং তাদের সাহায্যের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালান। এমনকি পাকিস্তান সফরকালে তার নিজের গলার হার বন্যায় দুর্গতদের সহায়তার জন্য দান করেন।

সেবছরের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানের ২০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। দুই হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় দুই কোটি মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন।

তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের সরকার সে বছর তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘নিশান ই পাকিস্তানে’ ভূষিত করেন।


১৯৬৫ সালের ১৬ ই ফ্রেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তান্বুলে জন্মগ্রহণ করেন এমিনি গুলবারান। আরব বংশোদ্ভূত পাঁচ ভাই-বোনের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ এমিনি। তুরস্কের একটি আর্ট কলেজে অধ্যয়নরত এমিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টানেন।

১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং এমিনি গুলবারান এরদোগান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং এমিনি এরদোগানের সংসারে রয়েছে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। তারা হলেন- বিলাল এরদোগান, আহমেত বুরাক এরদোগান, সুমাইয়া এরদোগান ও ইসরা এরদোগান।

তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সেমিনারে।

তুরস্কে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানচেষ্টাকালে পর্যটন শহর মারমারিসে প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই ছিলেন এমিনি।

এমনকি এরপরেও বিভিন্ন শহরে জনগণের সাথে অবস্থানকালে এরদোগানের সাথে সাথেই থেকেছেন তিনি। সাক্ষাৎ করছেন অভ্যুত্থান প্রতিরোধে নিহত-আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে।


 এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি