লন্ডন

জঙ্গিবাদ প্রতিরধের লড়াইতে পোর্টসমাথের বাংলাদেশিরা

পোর্টসমাথের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম দু বছর ধরে উত্তর খুঁজেছেন কেন তার ছেলে মেহেদি হাসান কাউকে কিছু না বলে সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে চলে গেল।
তার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় এই ছেলেটি ছিল সবচেয়ে মেধাবী। সে কারণে, হাজারো কষ্ট হলেও অনেক খরচের বেসরকারি স্কুলে পাঠিয়েছিলেন ছেলেকে। স্কুল পাশ করে সাস্ক্সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার এক মাসের মধ্যে কাউকে কিছু না বলে শহরের আরও পাঁচটি তরুণের সাথে ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধ করতে দিতে সিরিয়ায় চলে যায়।
'সে ধার্মিক ছিল। আমি জানতাম সে দাওয়ার (ধর্মের) কাজ করছে। ভেবেছিলাম ভালো কাজই তো করছে। অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ছিল...কখনো মনে কোনও সন্দেহ হয়নি সে এরকম কাজ করতে পারে।'
মেহেদিকে ফিরিয়ে আনতে নুরুল ইসলাম এবং স্ত্রী তুরস্কের আকসাকালি সীমান্তে ১৯ দিন ছিলেন। ছেলের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগও করতে পেরেছিলেন। 'সে চলে আসতে রাজীও হয়েছিল। সীমান্ত থেকে দু-তিন মিনিটের দূরত্বের তাকে তারা ধরে ফেলে নিয়ে নিয়ে যায়।'
পরে নুরুল ইসলাম খবর পান গত বছর অক্টোবরের ২৪ বা ২৫ তারিখে সিরিয়ার কোবানি শহরে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে মেহেদি মারা যায়। সিরিয়ার তেল আবিয়াদ শহরে তার দাফন হয়েছে। ছেলের কথা বলতে গিয়ে বার বার তার গলা ধরে আসছিল।


'আমি এবং আমার স্ত্রী আমার চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করার জন্য, তাকে শিক্ষিত করার জন্য সবরকম চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি এই কাণ্ড হয়, তাহলে আমি তাকে নিয়তি ছাড়া আর কি বলবো।'
ইমেজ সঙ্কটে পোর্টসমাথের বাংলাদেশিরা
পোর্টসমাথ থেকে ছজন মুসলিম তরুণ সিরিয়ায় চলে গেছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকুলে সমুদ্র তীরের ছিমছাম সমৃদ্ধ এই শহরটি পুরো ব্রিটেনের নজরে পড়ে যায়। ২০১৩ সালের অক্টোবরের কথা। কিছুদিন পর যখন অস্ত্র হাতে তাদের ছবি-ভিডিও জেহাদি ওয়েবসাইটগুলোতে দেখা যেতে থাকে এবং জানা যায় যে এরা সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে যায় পোর্টসমাথের বাংলাদেশি কম্যুনিটির নাম।
গত দু বছর ধরে ঐ ছজনের মধ্যে একে একে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন স্বজনরা। সর্বশেষ মৃত্যুর খবর এসেছে জুলাইতে ইফতেখার জামানের। একজন শুধু বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছেন। তবে মাসুদুর চৌধুরী নামে ঐ যুবক এখন সন্ত্রাস আইনে ব্রিটেনের কারাগারে।
পোর্টসমাথ এবং আশপাশের এলাকায় হাজার সাতেক বাংলাদেশির বসবাস। দুদিন ধরে শহরের অন্তত দু ডজন লোকের সাথে কথা বলেছি যারা কোনও না কোনোভাবে এই ছজন তরুণকে প্রত্যক্ষভাবে চিনতেন। অনেকে প্রতিবেশী বা বন্ধু পুত্র হিসেবে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন। সবারই কম বেশি একই কথা – হ্যাঁ ছেলেগুলো ধার্মিক ছিল, মসজিদে যেত, কিন্তু এভাবে জঙ্গিবাদে দীক্ষা হবে তা তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি।