লস এঞ্জেলেসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক মারাত্মক পশু নিরোধক মাদক ‘ট্রান্ক’ (Tranq), যা বিশেষজ্ঞ ও ফেডারেল সংস্থাগুলোর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত শহরের গৃহহীন মাদকসেবীদের মধ্যে এই মাদক ফেন্টানিলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারের ফলে ওভারডোজ ও ভয়াবহ শারীরিক ক্ষতি ঘটছে।
'জম্বি ড্রাগ' নামে পরিচিত ট্রান্ক বা জাইলাজিন (Xylazine) মূলত পশুদের অজ্ঞান করার জন্য তৈরি একটি ওষুধ। বর্তমানে এটি অবৈধভাবে আমদানি হয়ে স্ট্রিট ফেন্টানিলের সঙ্গে মিশ্রিত হচ্ছে। এর প্রভাবে ব্যবহারকারীদের শরীরে পচন ধরছে এবং তারা আধা-অচেতন, ঘোরের মতো অবস্থায় চলে যাচ্ছেন।
গবেষকরা সতর্ক করছেন, ট্রান্ক অপিওইড নয়, ফলে Narcan-এর মতো সাধারণ ওভারডোজ চিকিৎসা পদ্ধতিও এতে কাজ করে না।
ড. জোসেফ ফ্রিডম্যান, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (সান দিয়াগো)-এর গবেষক, বলেন, “এটাই এখন আমাদের নতুন বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ট্রান্কের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া ও মেক্সিকো পর্যন্ত।”
ডাউনটাউন এলএ’র স্কিড রো এলাকায় এক মাদকসেবী জোশ বুকার বলেন, মাত্র তিন দিনের ব্যবহারে তার আঙুল পচে গেছে।
“ওরা ফেন্টানিলের সঙ্গে ট্রান্ক মেশায়… এরপর শরীরে হঠাৎ করে ফোসকা ওঠে,” জানান বুকার।
মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত তারা ৪৮,০০০ পাউন্ড মাদক আটক করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ট্রান্ক পাওয়া গেছে।
সিডনি আকি, সান দিয়াগো ফিল্ড অফিসের পরিচালক বলেন, “আমরা ট্রান্ক মূলত ফেন্টানিলের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থাতেই পাচ্ছি।”
যদিও পরিমাণে এই মুহূর্তে কম, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (DEA) জানিয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ট্রান্কযুক্ত পিল ও পাউডার জব্দের হার দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক স্থানীয় ল্যাব এটি নিয়ন্ত্রিত মাদক নয় বলে নিয়মিত পরীক্ষা করে না, ফলে প্রকৃত পরিসংখ্যানও কম রিপোর্ট হচ্ছে।
সান দিয়াগোর DEA ল্যাবে স্পেশাল এজেন্ট ব্রায়ান ক্লার্ক বলেন, “লস এঞ্জেলেস থেকে জব্দকৃত মাদকে দেখা গেছে বেগুনি রঙে রঞ্জিত ট্রান্ক-যুক্ত ফেন্টানিল, যা ড্রাগ বিক্রেতারা এক ধরণের বিপণন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। এই পরিমাণ যথেষ্ট ছিল পুরো ডাউনটাউন এলএ-কে মেরে ফেলার জন্য।”
DEA এলএ ডিভিশনের স্পেশাল এজেন্ট ম্যাথিউ অ্যালেন বলেন, “স্কিড রো-তে মানসিক অসুস্থ ও আসক্ত মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এই দুর্বল মানুষদের টার্গেট করছে।”
তবুও অনেক ব্যবহারকারী এই ভয়াবহতা সত্ত্বেও মাদক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না।
বুকার বলেন, “এটা এক ধরনের জুয়া—যা আমরা প্রতিদিন খেলি। এটাই আমাদের বাস্তবতা।”
এই পরিস্থিতি লস এঞ্জেলেসে গৃহহীন মাদকসেবীদের জন্য এক নতুন ও বিপজ্জনক মহামারির আকার নিচ্ছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম