মুখে সবাই ‘সৌদি’ বলেন। কিন্তু আসলে তারা বোঝান মধ্যপ্রাচ্যের কথা। সৌদি আরব, কুয়েত সব দেশই হিজলের মানুষের কাছে ‘সৌদি’।
হিজল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার একটা প্রত্যন্ত অঞ্চল। বহুপুরনো শহর কান্দির কাছে।
কয়েকবছর আগেও ছিল না রাস্তা, বছরের একটা বড় সময়েই চাষের জমি ডুবে থাকত বিলের জলে। পাকা বাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।
ছেলেপেলেদের মধ্যে পড়াশোনা করত না অনেকেই। চুরি ডাকাতির জন্য কুখ্যাতিও ছিল এলাকাটার।
কিন্তু যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো হঠাৎই বদলে গেছে হিজল।
এই হিজল আর সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার কাহিনী উঠে এসেছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের একাধিক উপন্যাসে।
কী ভাবে বদলে গেল সেই হিজল?
কয়েক বছর আগে থেকে বিলের জলে ভরে থাকা এই হিজলের যুবকরা মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া শুরু করেন। কেউ সৌদি আরব, কেউ কুয়েত, কেউ অন্য কোনো দেশে।
একেবারে গোড়ার দিকে যারা মধ্য প্রাচ্যে চলে গিয়েছিলেন, তাদেরই একজন শ্রীকন্ঠপুরের আমির শেখ। মরু রাখালের কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলছিলেন, ‘দেশে খেতে পেতাম না। বাচ্চাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম না, ওদের পড়াতে পারতাম না। বন্যায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত। তাই বছর সাতেক আগে সৌদি চলে গিয়েছিলাম। মরুভূমির মধ্যে থাকতে হত আড়াই তিন হাজার ছাগল চড়াতে হত। সেখানে থাকার জায়গা ছিল না, খাবারও পেতাম না সবসময়ে। অত কষ্ট সহ্য করতে পারিনি। পালিয়ে এসেছিলাম। বছর তিনেক পরে আবার চলে যাই কুয়েতে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে।’
আমির শেখের ছেলে মেয়ে এখন ওই শ্রীকন্ঠপুর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে পড়াশোনা করে।
ওই স্কুলের ছাত্র ছাত্রী আহেবুর, নিফারুল, মুশারফ, তাকলেমাদের মতো অনেকর বাবারাই মধ্য প্রাচ্যে চলে গেছেন।
দুই, তিন বা চার বছর পর পর বাড়ি ফেরেন তারা। সঙ্গে বাচ্চাদের কারো জন্য ঘড়ি, কারো জন্য লিপস্টিক, কারো জন্য মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন।
ওই শিশুরা নিমেষে ভুলে যায় বাবার একটানা অনুপস্থিতির দুঃখ। তবে ওরা এটাও বুঝতে শিখেছে বাবারা কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আবারো ফিরে যাবে ‘সৌদিতে’।
নতুন গ্রামের যুবক মার্জুল শেখ বেশ কয়েক দফায় মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থেকেছেন।
তার ভাষায়, ‘প্রথমবার আব্বা সুদে টাকা ধার করে সৌদি পাঠিয়েছিল। তখন আমাদের খড়ের চালের ঘর ছিল। তিন বছরে সাত লাখ টাকা রোজগার করে ফিরে আসি। সেই টাকাতেই পাকা ঘর, ডিপ টিউবওয়েল করেছি, দুটো ট্র্যাক্টর কিনেছি। তারপর আবার ফিরে গেছি কুয়েতে। আমরা চার ভাই-ই পালা করে বিদেশে যাই কাজ করতে। সৌদির টাকাতেই তো সংসার চলছে, শুধু আমার না, হিজলের বেশিরভাগ মানুষেরই।’
এমন পরিবার হিজলে খুঁজে পাওয়া কঠিন- যেখান থেকে কেউ না কেউ মধ্য প্রাচ্যে কাজ করতে যাননি।
ব্যতিক্রম হরি নগর গ্রামের মুজিবর শেখের মতো কিছু পরিবার, যাঁদের বাড়ির কেউই কখনো বিদেশে কাজে যাননি।
তবে যেসব পরিবারে মধ্য প্রাচ্যের অর্থ আসে না, তাদের যে অভাবের মধ্যে দিন কাটে, সেটা গ্রামগুলোর অনেকেই বলছিলেন।
মধ্য প্রাচ্যের অর্থ ছাড়া হিজলের জীবন চালানো কঠিন।
কঠিন জীবন অবশ্য যারা বিদেশে থাকেন, তাদেরও। নিজের দেশে পাকা ঘর, পরিবারের জন্য একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয় এদের।
ওই পরিশ্রমের টাকা দেশে পরিবারের কাছে পাঠানোর পরিষেবা দেওয়ার জন্য হিজলে পৌঁছিয়ে গেছে বেসরকারি মানি ট্র্যান্সফার সংস্থাগুলো।
নতুন গ্রামের বাজারে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্র্যান্সফারের দোকান চালান হাফিজুর রহমান।
হাফিজুরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কী পরিমাণ অর্থ মধ্য প্রাচ্য থেকে হিজলে আসে প্রতি মাসে?
‘“আমার এই দোকানে মাসে প্রায় দুশোটা লেনদেন হয়, কেউ দশ হাজার কেউ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠায়। মাসে গড়ে ৬০ লক্ষ টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। আর হিজলে আমার মতো আরো চারটে জায়গায় দোকান রয়েছে,’ জানালেন হাফিজুর রহমান।
অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা রেমিটান্স হয় হিজলে।
সেই অর্থেই প্রায় সবাই পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। বেড়ে গেছে হিজলের জমির দাম।
একই সঙ্গে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার মানেও বদল এনে ফেলেছে হিজল। এই বদল খুব সহজেই চোখে পড়েছে কাছের বড় শহর কান্দির পোশাক ব্যবসায়ী জগবন্ধু পোদ্দারের।
তিনি বলছিলেন, ‘“হিজলের লোকের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, জীবনযাত্রার মানও বদলিয়ে গেছে। তারা তো এখন হিজল বা কান্দিতে আটকিয়ে নেই; বিদেশে থাকে তারা।’
পোদ্দারের দোকানেই দেখা হয়েছিল হিজল নতুন গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবির সঙ্গে। তার দেওর অনেক দিন ধরেই বিদেশে কাজ করেন। কেনাকাটা করতে ছেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন আনোয়ারা বিবি।
আগে তো একটা দুটোই জামাকাপড় থাকত। এখন বিদেশ থেকে টাকা আসে, তাই দরকার না থাকলেও বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো করে জামাকাপড় কেনার সামর্থ্য হয়েছে,” বলছিলেন আনোয়ারা বিবি।
শুধু যে হিজলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় বা বাইরের চাকচিক্যে বদল এসেছে তা নয়। হিজল বদলেছে ভেতরে ভেতরেও।
কান্দি রাজ কলেজের বাংলার অধ্যাপক ও এই এলাকার সমাজজীবনের গবেষক তাপস ব্যানার্জী বলছিলেন, “এই যে পুরুষরা বিদেশে থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের অনেক বেশি দায় দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। সংসারের ভেতরে-বাইরে। আগে যে কাজ শুধু পুরুষরাই করতেন, সেগুলোও বাধ্য হয়ে মেয়েরা করছে। তাই তারা পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠছে।
‘নিজেদের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন তারা আগের থেকে। নারী ক্ষমতায়ন হিজলের বদলে যাওয়ার একটা বড় সুফল, যা হয়তো আগামী ৭-১০ বছরে আরো বেশি করে দেখা যাবে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হিজল বদলে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দা ছাড়াও স্বস্তি পেয়েছে প্রশাসন আর পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত ত্রিবেদীর কথায়, “হিজলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতিদের বড় ঘাঁটি ছিল আগে। চুরি ডাকাতি- সব কিছুই চলত। কিন্তু যত স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে, ততই কুকর্ম থেকে সরে এসেছেন হিজলের মানুষ।
ত্রিবেদীই বলছিলেন যে এটা রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা- যারা সরকার চালান, তাদের ব্যর্থতা যে চাষ না করতে পেরে, অন্য কোনো কর্মের সংস্থান না করতে পেরে গ্রামের যুবকদের কঠিন জীবন বেছে নিতে হচ্ছে মধ্য প্রাচ্যে গিয়ে।
হিজল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার একটা প্রত্যন্ত অঞ্চল। বহুপুরনো শহর কান্দির কাছে।
কয়েকবছর আগেও ছিল না রাস্তা, বছরের একটা বড় সময়েই চাষের জমি ডুবে থাকত বিলের জলে। পাকা বাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।
ছেলেপেলেদের মধ্যে পড়াশোনা করত না অনেকেই। চুরি ডাকাতির জন্য কুখ্যাতিও ছিল এলাকাটার।
কিন্তু যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো হঠাৎই বদলে গেছে হিজল।
এই হিজল আর সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার কাহিনী উঠে এসেছে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের একাধিক উপন্যাসে।
কী ভাবে বদলে গেল সেই হিজল?
কয়েক বছর আগে থেকে বিলের জলে ভরে থাকা এই হিজলের যুবকরা মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া শুরু করেন। কেউ সৌদি আরব, কেউ কুয়েত, কেউ অন্য কোনো দেশে।
একেবারে গোড়ার দিকে যারা মধ্য প্রাচ্যে চলে গিয়েছিলেন, তাদেরই একজন শ্রীকন্ঠপুরের আমির শেখ। মরু রাখালের কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলছিলেন, ‘দেশে খেতে পেতাম না। বাচ্চাগুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম না, ওদের পড়াতে পারতাম না। বন্যায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যেত। তাই বছর সাতেক আগে সৌদি চলে গিয়েছিলাম। মরুভূমির মধ্যে থাকতে হত আড়াই তিন হাজার ছাগল চড়াতে হত। সেখানে থাকার জায়গা ছিল না, খাবারও পেতাম না সবসময়ে। অত কষ্ট সহ্য করতে পারিনি। পালিয়ে এসেছিলাম। বছর তিনেক পরে আবার চলে যাই কুয়েতে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে।’
আমির শেখের ছেলে মেয়ে এখন ওই শ্রীকন্ঠপুর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে পড়াশোনা করে।
ওই স্কুলের ছাত্র ছাত্রী আহেবুর, নিফারুল, মুশারফ, তাকলেমাদের মতো অনেকর বাবারাই মধ্য প্রাচ্যে চলে গেছেন।
দুই, তিন বা চার বছর পর পর বাড়ি ফেরেন তারা। সঙ্গে বাচ্চাদের কারো জন্য ঘড়ি, কারো জন্য লিপস্টিক, কারো জন্য মোবাইল ফোন নিয়ে আসেন।
ওই শিশুরা নিমেষে ভুলে যায় বাবার একটানা অনুপস্থিতির দুঃখ। তবে ওরা এটাও বুঝতে শিখেছে বাবারা কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আবারো ফিরে যাবে ‘সৌদিতে’।
নতুন গ্রামের যুবক মার্জুল শেখ বেশ কয়েক দফায় মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থেকেছেন।
তার ভাষায়, ‘প্রথমবার আব্বা সুদে টাকা ধার করে সৌদি পাঠিয়েছিল। তখন আমাদের খড়ের চালের ঘর ছিল। তিন বছরে সাত লাখ টাকা রোজগার করে ফিরে আসি। সেই টাকাতেই পাকা ঘর, ডিপ টিউবওয়েল করেছি, দুটো ট্র্যাক্টর কিনেছি। তারপর আবার ফিরে গেছি কুয়েতে। আমরা চার ভাই-ই পালা করে বিদেশে যাই কাজ করতে। সৌদির টাকাতেই তো সংসার চলছে, শুধু আমার না, হিজলের বেশিরভাগ মানুষেরই।’
এমন পরিবার হিজলে খুঁজে পাওয়া কঠিন- যেখান থেকে কেউ না কেউ মধ্য প্রাচ্যে কাজ করতে যাননি।
ব্যতিক্রম হরি নগর গ্রামের মুজিবর শেখের মতো কিছু পরিবার, যাঁদের বাড়ির কেউই কখনো বিদেশে কাজে যাননি।
তবে যেসব পরিবারে মধ্য প্রাচ্যের অর্থ আসে না, তাদের যে অভাবের মধ্যে দিন কাটে, সেটা গ্রামগুলোর অনেকেই বলছিলেন।
মধ্য প্রাচ্যের অর্থ ছাড়া হিজলের জীবন চালানো কঠিন।
কঠিন জীবন অবশ্য যারা বিদেশে থাকেন, তাদেরও। নিজের দেশে পাকা ঘর, পরিবারের জন্য একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয় এদের।
ওই পরিশ্রমের টাকা দেশে পরিবারের কাছে পাঠানোর পরিষেবা দেওয়ার জন্য হিজলে পৌঁছিয়ে গেছে বেসরকারি মানি ট্র্যান্সফার সংস্থাগুলো।
নতুন গ্রামের বাজারে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি ট্র্যান্সফারের দোকান চালান হাফিজুর রহমান।
হাফিজুরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কী পরিমাণ অর্থ মধ্য প্রাচ্য থেকে হিজলে আসে প্রতি মাসে?
‘“আমার এই দোকানে মাসে প্রায় দুশোটা লেনদেন হয়, কেউ দশ হাজার কেউ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠায়। মাসে গড়ে ৬০ লক্ষ টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। আর হিজলে আমার মতো আরো চারটে জায়গায় দোকান রয়েছে,’ জানালেন হাফিজুর রহমান।
অর্থাৎ মাসে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা রেমিটান্স হয় হিজলে।
সেই অর্থেই প্রায় সবাই পাকা বাড়ি করে ফেলেছেন। বেড়ে গেছে হিজলের জমির দাম।
একই সঙ্গে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার মানেও বদল এনে ফেলেছে হিজল। এই বদল খুব সহজেই চোখে পড়েছে কাছের বড় শহর কান্দির পোশাক ব্যবসায়ী জগবন্ধু পোদ্দারের।
তিনি বলছিলেন, ‘“হিজলের লোকের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, জীবনযাত্রার মানও বদলিয়ে গেছে। তারা তো এখন হিজল বা কান্দিতে আটকিয়ে নেই; বিদেশে থাকে তারা।’
পোদ্দারের দোকানেই দেখা হয়েছিল হিজল নতুন গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা বিবির সঙ্গে। তার দেওর অনেক দিন ধরেই বিদেশে কাজ করেন। কেনাকাটা করতে ছেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন আনোয়ারা বিবি।
আগে তো একটা দুটোই জামাকাপড় থাকত। এখন বিদেশ থেকে টাকা আসে, তাই দরকার না থাকলেও বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো করে জামাকাপড় কেনার সামর্থ্য হয়েছে,” বলছিলেন আনোয়ারা বিবি।
শুধু যে হিজলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় বা বাইরের চাকচিক্যে বদল এসেছে তা নয়। হিজল বদলেছে ভেতরে ভেতরেও।
কান্দি রাজ কলেজের বাংলার অধ্যাপক ও এই এলাকার সমাজজীবনের গবেষক তাপস ব্যানার্জী বলছিলেন, “এই যে পুরুষরা বিদেশে থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের অনেক বেশি দায় দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। সংসারের ভেতরে-বাইরে। আগে যে কাজ শুধু পুরুষরাই করতেন, সেগুলোও বাধ্য হয়ে মেয়েরা করছে। তাই তারা পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠছে।
‘নিজেদের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন তারা আগের থেকে। নারী ক্ষমতায়ন হিজলের বদলে যাওয়ার একটা বড় সুফল, যা হয়তো আগামী ৭-১০ বছরে আরো বেশি করে দেখা যাবে,’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
হিজল বদলে যাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দা ছাড়াও স্বস্তি পেয়েছে প্রশাসন আর পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ।
কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত ত্রিবেদীর কথায়, “হিজলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতিদের বড় ঘাঁটি ছিল আগে। চুরি ডাকাতি- সব কিছুই চলত। কিন্তু যত স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে, ততই কুকর্ম থেকে সরে এসেছেন হিজলের মানুষ।
ত্রিবেদীই বলছিলেন যে এটা রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা- যারা সরকার চালান, তাদের ব্যর্থতা যে চাষ না করতে পেরে, অন্য কোনো কর্মের সংস্থান না করতে পেরে গ্রামের যুবকদের কঠিন জীবন বেছে নিতে হচ্ছে মধ্য প্রাচ্যে গিয়ে।