নিউইয়র্ক

স্টাইভেসান্ট কেলেঙ্কারি: এক বাংলাদেশি ছেলের হাতে নকলের সাম্রাজ্য

নিউইয়র্কের মর্যাদাসম্পন্ন স্টাইভেসান্ট হাই স্কুলের ২০১২ সালের চিটিং কেলেঙ্কারি এখনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে গেঁথে আছে। এই কাণ্ডে এক বাংলাদেশি বাবা-ছেলের নাম জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ছিল—বাংলাদেশি সাংবাদিক নজমুল আহসান-এর ছেলে নায়েম আহসান প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় নকল করতে সহায়তা করেছিল। ঘটনার জেরে স্কুলের দীর্ঘদিনের প্রধান শিক্ষক স্ট্যানলি টেইটেল পদত্যাগে বাধ্য হন। নকলের সাম্রাজ্য ও নেপথ্যের কাহিনি নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে উঠে আসে, ‘স্টাই চিটার’ নামে পরিচিত নায়েম আহসান রিজেন্টস পরীক্ষায় টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে উত্তর পাঠিয়ে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছিল। তবে তার বাবা দাবি করেন, ছেলের এ কাজের পেছনে ব্যক্তিগত কারণ ছিল। নজমুল আহসান বলেন, তার ছেলে সাম্প্রতিক ক্যানসার আতঙ্ক ও অ্যাস্টোরিয়া ট্রেন স্টেশনে ডাকাতির ঘটনার পর পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। তাই ব্যক্তিগত চাপেই এমন ভুল করেছে। তিনি যোগ করেন, “আমি তার কাজকে সমর্থন করি না, তবে বুঝতে পারি কেন সে করেছে। একজন বাবা হিসেবে আমি ছেলের পাশে আছি।” কিন্তু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দাবি ভিন্ন। তাদের মতে, নায়েম ছিল পুরো চক্রের হোতা। সহপাঠী ক্যাটালিনা পিকাটো বলেন, “সে বহুদিন ধরে এ কাজ করে আসছিল। ধরা পড়ার পর ফেসবুকেও আক্ষেপ করেছে।” ২০১২ সালের ১৮ জুন স্প্যানিশ রিজেন্টস পরীক্ষায় টেক্সট করে উত্তর পাঠাতে গিয়ে নায়েম ধরা পড়ে। পরে তার মোবাইলে আরও তিনটি পরীক্ষার উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে তাকে অন্য স্কুলে স্থানান্তর করতে বাধ্য করা হয়। নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নায়েম নিয়মিত হোমওয়ার্কের উত্তর শেয়ার করত, পুরোনো প্রশ্ন সংগ্রহ করত এবং অনেক সময় পরীক্ষার খাতাও ফোনে পাঠিয়ে দিত। নায়েম দাবি করে, স্টাইভেসান্টের অতি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ শিক্ষার্থীদেরকে নকলের দিকে ঠেলে দেয়। এমনকি এক জীববিজ্ঞানের শিক্ষক পরীক্ষার অ্যাসাইনমেন্টে সবার উত্তর সঠিক হলে তিন নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও নায়েমকে উত্তর শেয়ার করতে ধরা হয়েছিল, শিক্ষক তবুও বিষয়টি রিপোর্ট করেননি। ভ্যালেডিক্টোরিয়ান ভিনায় মায়ার সমাপনী ভাষণে স্বীকার করেন, “স্টাইভেসান্ট হলো এক অস্থির পরিবেশ, যেখানে করিডরে হোমওয়ার্ক কপি, ক্লাস ফাঁকি আর ফেসবুকে নকল ছিল সাধারণ ব্যাপার।” স্কুলের কঠোর পদক্ষেপ এই কেলেঙ্কারির পর স্কুল কর্তৃপক্ষ মোবাইল ব্যবহার কড়া নজরদারিতে আনে। নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দুই দিনেই ১৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। শিক্ষার্থীদের দিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক অনেস্টি পলিসি’ স্বাক্ষর করানো হয় এবং একটি ‘অনার কোড’ প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চিটিং কেলেঙ্কারির তদন্তের মধ্যেই দীর্ঘদিনের প্রধান শিক্ষক স্ট্যানলি টেইটেল অবসরের ঘোষণা দেন। যদিও শিক্ষা বিভাগ সরাসরি তদন্তকে তার পদত্যাগের সঙ্গে যুক্ত করেনি, তবে এই ঘটনায় মোট ৭১ জন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ছয়জন, নায়েম আহসানসহ, সাময়িক বরখাস্ত হয়। অন্যদের বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়—কেউ নেতৃত্বের পদে নিষিদ্ধ হয়, কেউ ক্যাম্পাসের বাইরে লাঞ্চে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, আবার অনেককে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হয়। স্টাইভেসান্ট অভিভাবক সমিতির সহ-সভাপতি পিটার গালাসিনাও বলেন, “টেইটেল ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে সম্মানিত নেতা। তার বিদায় আমাদের জন্য দুঃখজনক।”

এলএবাংলাটাইমস/ওএম