ধর্ম

আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা-ঈদ মোবারক

বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল
ইসলাম লিখেছিলেন_ 'মনের পশুরে করো
জবাই,/পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই'। লোভ-
লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ নামের যে পশু
মনের মাঝে বাস করে, তাকে জবাই করার
প্রেরণা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল
আজহা। রাত পোহালেই আগামীকাল
শুক্রবার ত্যাগের ঈদ। কোরবানি মানে
পশুহত্যা নয়। কবি নজরুলের ভাষায় ঈদুল
আজহা মানে, সত্যাগ্রহের শক্তির
উদ্বোধনের দিন। মনের পশু হত্যা করার
দিন। তাই তো কবি বলেছেন, 'বকরীদি
চাঁদ করে ফরয়্যাদ, দাও দাও কোরবানি/
আল্লারে পাওয়া যায় না, করিয়া তাঁহার
না-ফরমানি!' আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি
করে লোক দেখানোর জন্য দামি গরু
কিনে জবাই করলেই কোরবানি আদায়
হবে না। আল্লাহকে খুশি করতে মনের
পশুপ্রবৃত্তি দমনের নিয়তে পশু জবাই করতে
হবে। পবিত্র কোরআনুল কারিমের বর্ণনা
অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর
নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) পৃথিবীতে
তার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান হজরত
ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দেওয়ার
উদ্যোগ নেন। তবে আল্লাহতায়ালার
কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে
দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-
এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ
করে প্রতি বছর মুসলমানরা কোরবানি
দেন। এ পশু কোরবানি সম্পূর্ণ রূপক।
আল্লাহর পথে ত্যাগই ঈদের আসল শিক্ষা।
কোরবানির মাংস মানুষের মাঝে
বিলিয়ে দেওয়া কোনো দান নয় বরং
ত্যাগ। কোরবানির মাহাত্ম্য ও গুরুত্বের
কারণেই হাটে হাটে পছন্দের গরু খুঁজছেন
সবাই। সামর্থ্যবানরা নিজেদের নামে,
স্বজনের নামে পশু কোরবানি করে
আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ে সচেষ্ট হবেন।
যাদের সামর্থ্য নেই তারাও বাদ যাবেন
না ঈদের আনন্দ থেকে। আল্লাহতায়ালা
সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি
করা ফরজ করেছেন। সেই কোরবানির
মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্রদের
মধ্যে বিতরণ করতে হবে। সবার ঘরেই যেন
ঈদের আনন্দ আসে, তাই বিত্তবানদের
সাধ্যমতো সহায়তা করতে হবে পাশের
দরিদ্র প্রতিবেশীদের। ইসলামের বিধান
অনুযায়ী, এটা দান নয়, বিত্তবানের সম্পদে
দরিদ্রের অধিকার। ঈদের নামাজ দিয়ে
দিনের শুরু হবে। সকালে পরিচ্ছন্ন
পোশাক পরে শিশু-বৃদ্ধ-যুবাসহ সব বয়সী
মানুষ শরিক হবে ঈদের জামাতে। ধনী-
গরিব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায়
করবে। এরপর শুরু হবে কোলাকুলি, শুভেচ্ছা
ও সৌহার্দ্য বিনিময়। শহরবাসীর ঈদ
মানেই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা।
এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে বড়
শহরগুলো ছেড়ে কোটি মানুষ ফিরে
গেছেন গ্রামে। গতকাল বুধবার শেষ
কর্মদিবসেও বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা
ছেড়েছেন প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন
করতে। ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল
হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ,
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা
ঈদের ত্যাগের শিক্ষায় সুখী-সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা
জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন
দলের নেতারা। সংবাদপত্রগুলো ঈদের
গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ লেখা
প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে
প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন
চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ
অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে। রাজধানীর
গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সরকারি উদ্যোগে
জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত
পতাকায় সাজানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ
ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে।
ঈদের খুশি থেকে বাদ যাবে না অসুস্থ
ব্যক্তি, অনাথ শিশু, কারাবন্দিরাও। হাসপাতাল, শিশু সদন, আশ্রয়কেন্দ্র ও কারাগারে উন্নত খাবার দেওয়া হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিনা টিকিটে জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে। "এল এ বাংলাটাইমস" এর পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদ মোবারক।