ধর্ম

স্বাগতম রমজানুল মোবারক

রাজধানীর লালবাগের গৃহবধূ শায়েলা আক্তার আজ প্রথম রমজানে সেহরি খেতে উঠতে পারবেন কি-না এ চিন্তায় রাতে ঘুমাননি। রাত আড়াইটা বাজতে না বাজতেই বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে ও গৃহপরিচারিকাকে ডেকে তুললেন। রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা জ্বেলে সেহরির জন্য রাতেই রান্না করে রাখা খাবার গরম করা শুরু করলেন।
সেহরি খাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা এ বাড়ির স্কুলপড়ুয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছোটশিশু সাফিউলের। সে একবার বাবাকে আরেকবার দাদাকে খাবার টেবিলে ডাকাডাকি করছো। এদিকে শায়েলা খাবার গরম করে টেবিলে রেখেই মোবাইলে মায়ের বাড়িতে যোগাযোগ করে উঠেছে কিনা জানতে চাইলো।
এ দৃশ্যে শুধু লালবাগের শায়েলা আক্তারের বাড়ির একার দৃশ্য নয়, এ যেন রাজধানীসহ সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারের চিত্র। হঠাৎ করে মধ্যেরাতে জেগে উঠলো হাজার হাজার মুসলমান পরিবারের বাড়ির বাতি।
প্রথম রমজানে সেহরি খাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিশেষ করে ছোটছোট শিশুদের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছিল। অধিকাংশ বাবা-মা ছেলেমেয়েদের কষ্ট হবে এই ভেবে রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করলেও শিশুরা পরিবারের মুরুব্বি দাদা-দাদির কাছে ঘুম থেকে ডেকে তোলার আবদার করে রাখে।
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা শোনার পর থেকেই সারামাস রোজা রাখার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। হাজার হাজার মুসল্লি মসজিদে গিয়ে খতম তারাবিহর নামাজ পড়ে আসেন। গৃহবধূরা সেহরিতে কী কী খাবার থাকবে তা রান্না করতে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যাদের পরিবার-পরিজন নেই তারা নিজ উদ্যোগে আগাম রান্না করিয়ে রাখেন। কেউ কেউ আবার মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে হোটেলে গিয়ে সেহরির খাবার খান।
প্রচলিত রীতি অনুসারে পাড়া-মহল্লার মসজিদ থেকে মাইকযোগে সেহরি খাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ পরপর সেহরি খেতে উঠার দাওয়াত আসতে থাকলো। কোথাও কোথাও তরুণরা দলবেঁধে সেহরি খাওয়ার দাওয়াত দিতে থাকে। ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে কেউ মসজিদে আবার কেউ ঘরে বসে নামাজ আদায় করেন।