ধর্ম

কোরআনের অনুবাদ পড়ে নামাজ আদায় করা শুদ্ধ কিনা?

আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় আল কুরআনের তরজমা পড়ে নামাজ আদায় করলে শুদ্ধ হবে কি না, এ নিয়ে দুটি মত রয়েছে। এক. সাধারণভাবে তা শুদ্ধ হবে অথবা আরবী উচ্চারণ করতে অক্ষম হলে শুদ্ধ হবে। দুই. শুদ্ধ হবে না।
প্রথম মতটি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)- এর প্রাচীন মত। তিনি ফারসি ভাষায় অনূদিত কুরআন পড়ে নামাজ পড়া জায়েজ মনে করতেন। অর্থাৎ তিনি মনে করতেন যে কুরআন মূলত অর্থের নাম। আর একই অর্থ বিভিন্ন ভাষার শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। অবশ্য ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এ মত থেকে ফিরে এসেছেন বলে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
ইমাম আবু ইউসূফ ও ইমাম মুহাম্মদ বলেছেন যে, যে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে শুধু সে ক্ষেত্রেই তা শুদ্ধ হবে। অতএব আরবীতে কুরআন পড়তে যে একেবারেই অপারগ তার জন্য অনুবাদ পড়েই নামাজ আদায় শুদ্ধ হবে। তবে যে ব্যক্তি আরবীতে কুরআন পড়তে পারে, তার জন্য শুদ্ধ হবে না। মিরাজুদ্-দেরায়াতে বলা হয়েছে- আমরা অপারগ ব্যক্তির জন্য, অর্থে কোনোরূপ বিকৃতিসাধন না করার শর্তে, কুরআনের অনুবাদ পড়া জায়েজ করেছি; কেননা অনুবাদ কুরআনের অর্থকে শামিল করে বলে তা এক হিসেবে কুরআন। অতএব তা পড়া একেবারে না পড়ার চেয়ে উত্তম। কারণ মানুষের সাধ্যের নিরিখে দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে।’ (উদ্ধৃতিটি আল কাত্তান থেকে নেয়া, পৃ: ৩১২) 
দ্বিতীয় মতটি হলো জমহুর বা অধিকাংশ ফকীহদের। সে হিসেবে ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল আল কুরআনের অনুবাদ দিয়ে নামাজ পড়া অবৈধ বলেছেন। আরাবীতে কুরআন পড়তে মুসল্লী সক্ষম কি অক্ষম তা কোনো বিবেচনার বিষয় হবে না; কেননা অনুবাদ কুরআন নয়। কুরআন হলো, ইজাযবিশিষ্ট বাক্যমালা, যা আল্লাহর কালাম। দলিল হিসেবে তারা নিম্নবর্ণিত আয়াত পেশ করেন,  وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآَنًا أَعْجَمِيًّا لَقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آَيَاتُهُ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ আমি যদি একে (কুরআনকে) অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়। (সূরা ফুসসিলাত:৪৪)
আল কুরআন আবরিতে বোঝার জন্য সকল মুসলমানকেই সচেষ্ট থাকতে হবে। এমনকি ফকীহদের কেউ কেউ আরবী ভাষা শেখা মুসলমানদের ওপর ফরজ বলেছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ ‘ইক্তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম’ গ্রন্থে বলেন,‘ আর খোদ আরবী ভাষা শিক্ষা করা দ্বীনের একটি অংশ এবং তা জানা ফরজ; কেননা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নত বোঝা ফরজ। আর তা আরবী ভাষা বোঝা ব্যতীত বোঝা সম্ভব নয়। আর যা না হলে ওয়াজিব আদায় হয় না তাও ওয়াজিব। (উদ্ধিৃতিটি আল কাত্তান থেকে নেয়া হয়েছে: পৃ:৩১৩)