খেলাধুলা

পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

এশিয়া কাপে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে বুধবার পাকিস্তানকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো বাংলাদেশ। অলিখিত এই সেমিফাইনাল ম্যাচে সরফরাজ আহমেদের দলকে ৩৭ রানে হারিয়েছে মাশরাফি এন্ড কোং। ২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনালে তারা মোকাবেলা করবে ভারতে।

বুধবার আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ২৩৯ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান থেমেছে ৯ উইকেটে ২০২ রানে। বাংলাদেশী বোলারদের মোকাবেলায় শুরু থেকেই একের পর এক বিপর্যয়ে পড়া পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন শেষ পর্যন্ত হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মরুর মাঠে।

মাত্র ১৮ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ফখর জামান(০), বাবার আজম(১) ও অধিনায় সরফরাজ আহমেদ(১০) ফিরেছেন চার ওভারের মধ্যেই। এরপর শোয়েব মালিক ও ইমাম উল হকের ব্যাটে ম্যাচে ফিরেছিলো পাকিস্তান; কিন্তু শেষ সময়ে একের পর পর এক উইকেট হারিয়ে আবার বিপর্যয়ে পড়েছে দলটি।

প্রাথমিক বিপর্যয়ের পর চতুর্থ উইকেটে ওপেনার ইমাম উল হকের সাথে সাথে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের জুটি বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়। এই জুটি ৬৭ রান করে, তবে ২১তম ওভারে রুবেল হোসেনের প্রথম বলে শর্ট মিড উইকেটে মাশরাফির দুর্দান্ত এক ফ্লাইং ক্যাচ মালিককে সাজঘরে পাঠায়। পাকিস্তানের স্কোর তখন ৮৫।

এরপর দলীয় ৯৪ রানে ফিরে যান লেগ স্পিনার শাদাব খান। ওপেনার ইমাম উল হক তখনো এক প্রান্তে অটল। ষষ্ঠ উইকেটে ইমামের সাথে আসিফ আলীর ৭৩ রানের জুটিতে আবার ঘুড়ে দাড়ায় পাকিস্তান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে রান তুলতে থাকেন ইমাম ও আসিফ। দারুণ ধৈর্য্য আর দক্ষতায় দুজনে ছুটতে থাকেন লক্ষ্যপাণে। তবে ম্যাচে ফিরতে খুব বেশি সময় লাগেনি টাইগারদের।

মাত্র ৩ রানের ব্যবধানে এই দুই ব্যাটসম্যানের আউটে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ। ধীর স্থির হয়ে খেলতে থাকা দুজনেই যথাক্রমে ৩৯ ও ৪২তম ওভারে উইকেট ছেড়ে বেড়িয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। দলীয় ১৬১ রানে ৩১ রান করা আসিফ আলীকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে ৮৩ রান করা ইমাম উল হক যখন আউট হন পাকিস্তানের স্কোর বোর্ডে তখন ১৬৭ রান।

এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। পরের ব্যাটসম্যানরা শুধু ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজুর রহমান ৩৪ রানে ৪টি ও মিরাজ ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে মুশফিকুর রহীম আর মোহাম্মাদ মিথুদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৩৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মুশফিক ব্যক্তিগত ৯৯ রানে আউট হয়েছে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে। মিথুন করেছেন ৬০ রান। ১২ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে আবারও পথে ফেরানোর দায়িত্ব বর্তাল যেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুনের ওপর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ দুজন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩১ রান যোগ করে দলকে বাঁচিয়েছিলেন। আজ জুটিটা হলো ১৪৪ রানের। দলকে নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন, মিথুন একটা ধন্যবাদ পাবেন। কিন্তু পরক্ষণে তাঁকে কাঠগড়ায় উঠবে হবে দৃষ্টিকটু আউটের জন্য।

হাসান আলীর বলটা ওভাবে না চালালে সুন্দর ইনিংসটার সমাপ্তি ৬০ রানে শেষ হয় না। বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র ৪টি, মিঠুন এই তীব্র গরমে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে ভীষণ তৎপর থেকে ৪৪ রান নিয়েছেন দৌড়ে। মিঠুন আত্মহুতি দিলেও মুশফিক তবুও ছিলেন। কিছুতেই হার মানব না—এ পণে যেন লড়ে গেছেন। চোট, কন্ডিশন সব উপেক্ষা করে পাকিস্তানকে চোখ রাঙিয়ে গেছেন। ৯ চারে ৯৯ রান, মুশফিকের সেঞ্চুরি পাওনাই ছিল। অথচ হলো না। শাহিন বলটা ভালো করেছেন, থিতু হয়ে মুশফিক আরেকটু সতর্ক হতে পারতেন

৪১.৪ ওভারে মুশফিক যখন ফিরলেন, দলের স্কোর ৬ উইকেটে ১৯৭। চ্যালেঞ্জিং স্কোর পাওয়ার সম্ভাবনা তখনও শেষ হয়ে যায়নি। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে আজ বিদ্যুৎ চমকায়নি, মেহেদী মিরাজ ছোট কাঁধে বড় দায়িত্ব নিতে পারেননি। মাশরাফি বিন মুর্তজা ব্যাটসম্যান হতে পারেননি। শেষ ৫০ বলে বাকি ৪ উইকেটে তাই ৪২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ ।

এলএবাংলাটাইমস/এস/এলআরটি