খেলাধুলা

নতুন মিশন, নতুন প্রত্যাশা আজ শুরু টেস্ট-যুদ্ধ

হতে পারল কই? ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষণ গা
গরমের পরই বৃষ্টি, তল্পি-তল্পা গুটিয়ে
তাই যেতে হলো ইনডোরে। দক্ষিণ
আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট-যুদ্ধ শুরুর আগে
সেখানেই ব্যাট-বল নিয়ে নিজেদের
শেষবারের মতো ঝালিয়ে নিয়েছে
বাংলাদেশ।
কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বৃষ্টি। ঈদের
আনন্দটাও তাই হয়ে গেছে অনেকটাই
পানসে। সেভাবে বাইরে বেরোনোর
সুযোগই পাওয়া যায়নি। ঘরে শুয়ে-বসেই
সময়টা কাটাতে হয়েছে
বেশিরভাগেরই। লাগাতার
ক্রিকেটসূচির মধ্যে ৩ দিনের ক্ষুদ্র
ছুটিটাও তাই উপভোগ্য হয়নি
ক্রিকেটারদের। শেষবেলার
অনুশীলনেও সেই বৃষ্টির বাগড়া। তবে
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজকের
দিনটা রোদঝলমলেই হবে। সকালে
বৃষ্টি হলেও সোমবার দুপুর থেকেই
সূয্যিমামা হেসেছে। চট্টগ্রামের জহুর
আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ
সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হতে
যাওয়া ২ টেস্টের সিরিজের প্রথমটি
তাই যথাসময় শুরু হওয়া নিয়ে আশঙ্কা
রয়েছে বিন্দুমাত্রই।
ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের
মতো অতটা বিড়ম্বনা পোহাতে হবে
না হয়ত। তবে টেস্টের বাকি
দিনগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা
একেবারে উড়িয়ে দেয়াও যাচ্ছে
না। সাগরপাড়ের মাঠে খেলা, তাই
বৃষ্টি হানা দিতে পারে যখন- তখন।
সেটা যদি হয়ও, তাতেই বা কি করার
আছে? প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত
নেই। এ ছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসই
কি সবসময় পুরোপুরি মেলে?
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর
রহিমের মনেই যেমন আশঙ্কাটা বেশ
প্রবল। তবে সেই হিসাব কষেই
নিজেদের পরিকল্পনা সাজানোর
কথাটা তিনি বলে গেলেন
সিরিজপূর্ব আনুষ্ঠানিক সংবাদ
সম্মেলনে, 'আমাদের আবহাওয়ার
পূর্বাভাসে অনেক সময় যা ধারণা করা
হয়, সেটা ঠিক হয় না। আমাদের
স্ট্রেংথটাই আমাদের মাথায় রাখতে
হবে। সেই সঙ্গে কন্ডিশনও বিবেচনায়
রাখতে হবে।'
২ ম্যাচের টি২০ সিরিজে
নাস্তানাবুদ হলেও ওয়ানডে সিরিজে
নিজেদের শক্তিমত্তার জানান
দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম
ওয়ানডেতে হারের পরও দুর্দান্তভাবে
ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজ
টাইগাররা জিতে নিয়েছে ২-১
ব্যবধানে। তবে সাফল্যের এই ধারা
টেস্টে অনূদিত করাটা মোটেও সহজ
হবে না। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা এই
ফরম্যাটে বিশ্বসেরা। আইসিসি
র্যাংকিংয়েও বাকিদের থেকে
যোজন-যোজন এগিয়ে দলটি।
র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ সেখানে
একেবারে তলানিতে (নবম)। এ ছাড়া
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যতটা
শক্তিশালি, টেস্টে সেটা নয়।
ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের
প্রায় ৩ দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার
পরও স্বাগতিক শিবিরে হানা
দিয়েছিল হারের শঙ্কা। এ ছাড়া
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগারদের
অতীতও বেশ হতাশার। সফরকারীদের
বিপক্ষে এ পর্যন্ত ৮টি টেস্ট খেলে বড়
পরাজয় দেখতে হয়েছে প্রতিটিতেই।
বাস্তবতাটা মানছেন মুশফিক। তবে
ওয়ানডের মতো অতটা না হলেও
সাম্প্রতিক সময় টেস্টেও
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে ফুটে
উঠেছে উন্নতির ছাপ। মুশফিকের অন্তত
তেমনই দাবি। দক্ষিণ আফ্রিকার
বিপক্ষে সিরিজটাকে চ্যালেঞ্জ
মানলেও টাইগার অধিনায়ককে
আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে নিজেদের
পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা,
'বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করছে,
তাতে স্বাভাবিকভাবেই সবার
প্রত্যাশার মাত্রা বেড়ে গেছে।
সবাই চায় টেস্টেও বাংলাদেশ যেন
আরো ভালো খেলে। নিয়মিত না
জিতলেও যেন ধারাবাহিক পারফর্ম
করে। ৫ দিন ধারাবাহিক ভালো
ক্রিকেট খেলাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
শেষ ৮ মাস বাংলাদেশ যেভাবে
ক্রিকেট খেলছে, আশা করি এই ২
টেস্টেও সেভাবেই খেলবে।'
গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে
দুর্দান্ত পারফর্ম করে একটি টেস্ট ড্র
করেছিল বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ
আফ্রিকার বিপক্ষেও দারুণ কিছুর সুযোগ
দেখছেন মুশফিক। কিন্তু সুযোগটা শেষ
পর্যন্ত কতটা কাজে লাগানো গেল,
সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে
স্বাগতিকরা যে চেষ্টায় ত্রুটি
রাখবে না, সেটা না বললেও চলে।
অধিনায়ক মুশফিকই যেমন ব্যাটিংয়ে
বেশি মনোযোগী হতে কিপিং
গ্লাভস তুলে দিচ্ছেন লিটন কুমার
দাসের হাতে। তাতে একটা বিষয়
কিন্তু নিশ্চিত, ভারতের বিপক্ষে
একমাত্র টেস্টে অভিষিক্ত লিটন
খেলছেন আজো। তবে লেগস্পিনার
জুবায়ের হোসেন লিখন সেরা
একাদশে থাকবেন কিনা, সেটা
পুরোটাই নির্ভর করছে কন্ডিশনের ওপর।
আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন থাকলে পুরোপুরি
স্পিননির্ভর একাদশ না গড়ে আরো
একজন পেসার খেলানোর সম্ভাবনাই
বেশি। সে ক্ষেত্রে টি২০ এবং
ওয়ানডের পর টেস্ট অভিষেকটাও হয়ে
যাবে মুস্তাফিজুর রহমানের। সেটা না
হলে রুবেল হোসেনের সঙ্গে পেস
আক্রমণে পার্টটাইমার সৌম্য সরকারই
একমাত্র ভরসা। প্রোটিয়ারা স্পিনে
কিছুটা দুর্বল। তাই স্পিনটাই বেশি গুরুত্ব
পাচ্ছে স্বাগতিকদের কাছে।
ব্যাটিং লাইনআপটা অবশ্য বেশ
গোছানোই। চোট কাটিয়ে
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফেরা
নিশ্চিত করেই মিডলঅর্ডারের শক্তি
বাড়াবে। টপঅর্ডারে ইমরুল কায়েসের
সঙ্গে ফিরছেন মুমিনুল হক সৌরভও। এই
যুগল টেস্ট দলে নিয়মিত মুখ। তবে মুশফিক
পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, একাদশ
নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে
কন্ডিশনকে মাথায় রেখেই।
কন্ডিশন মাথায় রাখছে দক্ষিণ
আফ্রিকাও। ওয়ানডের ব্যর্থতা ভুলে
স্বাগতিকদের মোকাবেলা করার জন্য
তৈরি হচ্ছে তারা। আর কন্ডিশন আদ্র
হলে সেটার সুবিধা তাদেরই বেশি
পাওয়ার কথা। কারণ, দলটিতে রয়েছে
ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভেরনন
ফিলেন্ডারদের মতো বিধ্বংসী সব
পেসার। তাদের যে কেউ একা হাতেই
ধ্বসিয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে।
স্টেইন তো সময়ের সেরা। অতীতে
বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও দিক
হারিয়েছে তার গতিঝড়ে। সিমন
হারমার আর অ্যারন ফাঙ্গিসোদের
স্পিনের হাতটা যথেষ্টই ভালো। সঙ্গে
জেপি ডুমিনিও থাকছেন। বলতে
গেলে বোলিং বিভাগটা দুর্দান্ত
অতিথিদের। আর এটা কে না জানে,
টেস্টে পার্থক্যটা গড়ে দেন মূলত
বোলাররাই।
অতিথিদের বোলিংটা
নিঃসন্দেহে শক্তিশালী। সেটা
অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক কিন্তু
জোর গলায়ই বলে গেলেন, প্রতিপক্ষের
২০ উইকেট নেয়ার ক্ষমতা তার দলের
বোলারদেরও রয়েছে। ব্যাটসম্যানদের
যোগ্য সহচর্যের সঙ্গে বোলাররা যদি
নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিতে
পাওে, তাহলে ওয়ানডের মতো টেস্ট
সিরিজটাও হয়ে থাকবে আরেকটি
রূপকথা।