সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে চারজনের নাম ঘোষণা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে প্রায় ১৪ মাস আগে। এক বছরের জন্য কমিটির দুই ইউনিটের চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই চারজনই এখনো দায়িত্বে রয়েছেন।
সিলেটে জেলা ছাত্রলীগের পাঁচ বছর এবং মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির প্রায় চার বছর পর গত বছরের ১২ অক্টোবর চারজনকে দুটি ইউনিটের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্ব পাওয়ার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ একাধিক উপজেলা, পৌরসভা এবং কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি দেন। কিন্তু তাঁরা নিজেদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এ ছাড়া সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান ও সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম আহমদও সংগঠন গুছাতে ওয়ার্ড এবং কলেজ কমিটি করছেন।
তবে সিলেট ছাত্রলীগের একটি পক্ষ এক বছর আগের ওই কমিটিকে মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি করে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসার দাবি করেছে। সে সময় ছাত্রলীগের কমিটিকে ‘টাকার বিনিময়ে গঠন করা হয়েছে’ বলেও অভিযোগ আনা হয়েছিল। নেতৃত্বে আসা এবং কেন্দ্রের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল ওই পক্ষ। এদিকে ২০ ডিসেম্বর কেন্দ্রের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে নাম ঘোষণার পর এই দুই নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে শোডাউনও করেছে সিলেট ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।
যদিও জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা চার নেতাই বলছেন, তাঁরা নিজেদের কমিটিকে গোছানোর সুযোগই পাননি। ধীরে ধীরে তাঁরা তাঁদের আওতায় থাকা ইউনিটগুলোর সম্মেলন এবং সভার মাধ্যমে নতুন কমিটি বা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আগেই তালিকা জমা দিয়েছেন। তবে সেটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে অনুমোদন না হওয়ায় ঝুলে গেছে। তবে তাঁরা আশাবাদী, নতুন দায়িত্বে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেবেন।
মূলত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যার জেরে ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর বিলুপ্ত হয়েছিল সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। ২০১৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ২১ অক্টোবর মহানগর ছাত্রলীগের চার সদস্যের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দীর্ঘসূত্রতায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। অনেক পদপ্রত্যাশী দাবি করছেন ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার।
সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান কমিটি তাঁদের নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছেন না। জেলা ও মহানগরের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা, কলেজ এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করতে ব্যস্ত থাকছেন। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপপাঠাগার–বিষয়ক সম্পাদক এম আর মুহিব বলেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগ এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। মূলত বর্তমান নেতারা সাধারণ নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন। দলীয় বা অঙ্গ সংগঠনের কোনো কার্যক্রমে তাঁরা অবস্থান বা অংশ নেন না।
মহানগর ছাত্রলীগের নেতা ফাহিম রশিদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীণ ও ব্যর্থ। কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় যাঁরা সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা আশাহত হচ্ছেন। সবাই চাচ্ছেন বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হোক। মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান জেলা ছাত্রলীগ সুসংগঠিত রয়েছে। তবে একটি পক্ষ সব সময়ই বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নতুন কমিটি গঠন করেছি। গঠিত কমিটিগুলোতে যোগ্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা শিগগরিই পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস