বুধবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। একদিকে রাস্তায় নগরের একাধিক এলাকায় হাঁটুসমান পানি, অন্যদিকে নগরের বেশকিছু বিপনীবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি। এছাড়া নগরীর নিচু এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরের বাসিন্দাদের।
সকালে সরজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির ফলে নগরের মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, হযরত শাহজালাল (র.) মাজার এলাকার পায়রা ও রাজারগল্লি, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, যতরপুর, ছড়ারপাড়, তালতলাসহ বেশ কিছু নীচু এলাকার সড়ক তলিয়ে গেছে। এছাড়া বারুতখানা এলাকার কয়েকটি দোকান এবং দর্শনদেউড়ি, জালালাবাদ হাউজ, ইদ্রিস মার্কেট ও জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ভেতরে ঢুকে পড়েছে পানি। এদিকে রাস্তায় হাঁটুসমান পানি থাকায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ধীরগতির কারণে অনেক সড়কে দেখা দিয়েছে যানজট।
নগরের ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘সকলেই সামনের সিটি ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে একটু বৃষ্টি হলেই সিলেটের রাস্তাঘাট সমুদ্র হয়ে যায়। আমার এলাকায় হাঁটুর ওপরে পানি। ২০২২ সালে এসে যেখানে অন্যান্য দেশ কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত করাচ্ছে আর আমরা এখনো রাস্তা-ঘাট থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি না।’ টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ও এলাকাবাসী দোষারোপ করছেন নগর কর্তৃপক্ষকে। তারা এই জলাবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের উদাসীনতাকে দায়ী বলে মনে করছেন।
অনেকে বলছেন, ড্রেনেজ সিস্টেম যদি সঠিক সময় সংস্কার করে রাখা হতো, তাহলে এই ভোগান্তি জনগণকে পোহাতে হতো না। বার বার এই ভোগান্তির পর সিসিকের টনক না নড়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাজা ম্যানশনের পপি লাইব্রেরির সত্বাধিকারী গোলজার আহমদ বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি মার্কেটে পানি ঢুকে গেছে। এসে দেখি সব শেষ। আমার দোকানের ভেতরে হাঁটুর ওপরে পানি। নিচের সব বই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই আমাদের মার্কেটে পানি ঢুকে যায়। এভাবে তো ব্যবসা করা সম্ভব না।’
এ ব্যাপারে জানতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, বেশি পরিমাণ বৃষ্টির কারণে ড্রেন দিয়ে পানি নামতে সময় লাগছে। সিটি করপোরেশনের টিম কাজ করছে। কোথাও ময়লা-আবর্জনার জন্য পানি আটকে গেলে তা পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সিলেট সিটি এলাকায় যে ড্রেনগুলো নতুন করে করা হয়েছে সেগুলো আরও বড় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা সেই ড্রেইনগুলো তৈরির সময় অনেকটা সরু করে ফেলেছে। তাই সঠিকভাবে এসকল ড্রেন দিয়ে পানি না নামায় নগরের এই জলাবদ্ধতা। ড্রেইনগুলোকে আরও বড় করতে পাড়লে হয়তো নগরে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ও আজ বুধবার সকালে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। আজও সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানায় আবহাওয়া অফিস।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস