সিলেট

গ্রেফতারী পরোয়ানায় বেকায়দায় মেয়র আরিফ

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বেকায়দায় পড়েছেন। কি করবেন? কেমন করে করবেন? কখন করবেন? এই সব প্রশ্নের বেড়াজালে তাঁর চিন্তাভাবনা এখন এলোমেলো।সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। চার্জশীটে নাম অর্ন্তভূক্তির পর থেকেই তিনি বেকায়দায় রয়েছেন। রয়েছেন আত্মগোপনে।
বিষয়টি নিয়ে কেউ মেয়রের পক্ষে সাইফাই গেয়েছেন, কেউ কেউ আবার বিপক্ষে বলেছেন। কেউ বলছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সরকার পক্ষের দুষ্ট চালে মেয়র আরিফ বিপর্যস্ত। কেউ বলছেন পাপ বাপকেও ছাড়ে না।গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মেয়র আরিফ আত্মগোপন করে ছিলেন। সিটি কর্পোরেশনের কোন কর্মকান্ডেই তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি এবার সিলেটের আরেক আকর্ষণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ছিলেন না আরিফ, ছিলেন না বিজয় দিবসের কোন অনুষ্ঠানেও। তার এই আত্মগোপনের চর্চা হয়েছে নগরীর সর্বত্র।তবে যে যাই বলুক না কেন মেয়র আরিফ নিজেই বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। কখনো রাস্তায় ঝাড়ু হাতে বেরিয়ে পড়ে, কখনো অর্থমন্ত্রীর সাথে এক রিক্সায় চড়ে।
সিলেট নগরীর মাছিমপুর মনিপুরী পাড়ায় রাস্তার ওপরে গড়ে ওঠা অবৈধ বাজার উচ্ছেদের পর ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মন জয় করেছিলেন মেয়র আরিফ। দু’জন দুই মেরুর রাজনীতিবিদ হলেও জনসেবায় এক হয়ে কাজ করার অনন্য দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন নগরবাসীকে। আরিফ সিলেট নগরীর ছড়া দখলমুক্তকরণ কর্মকান্ড ঘুরে দেখান অর্থমন্ত্রীকে। তাও আবার একই রিক্সায় চড়ে।
এ নিয়ে সাধারণ নগরবাসীর ভাবনাতে তখন উকি মারে নানারকম প্রশ্ন।
কেউ কেউ ধারণা করেছেন হয়তোবা শেষ পর্যন্ত আওয়ামীলীগে যোগ দিবেন মেয়র আরিফ। কেউ বলেন আরিফ বিচক্ষণ, যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা ধরতে তার জুড়ি নেই।মেয়র আরিফুল হকের দূর্দিনে পাশে নেই নিজদল বিএনপি। তবে সিসিক কাউন্সিলর ও কিছু সামাজিক এবং পেশাজীবি সংগঠনের ব্যানারে আরিফের পক্ষে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে অনেককেই।
বিশ্বস্থ একটি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশ থাকার পরও সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং ছাত্রদল আরিফ ইস্যুতে রাজপথে শক্তিব্যয় করতে আগ্রহী নয়। অবস্থা বিবেচনায় দেখা যায় আরিফ আসলেই বেকায়দায় রয়েছেন।ঘরের শত্রু বিভীষন। আরিফের নিজের ঘরে নাকি শত্রুর আস্তানা। এমনটাই শুনা যায় চারিদিকে। কাউন্সিলর কয়েছ লোদীর সাথে তার সম্পর্কের অবনতি বিষয়টিকে আরো সত্য করে তুলেছে। ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব কয়েছ লোদীকে না দিয়ে ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরীকে দিয়েছিলেন আরিফ। সেজন্য আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিধিলঙ্গন আর অনিয়মের অভিযোগ এনে কোর্টে রীট করেছিলেন কয়েছ লোদী। অবশ্য আদালত কয়েছ লোদীর দায়ের করা রীট খারিজ করে দিয়েছেন।আদালতে জয়ী হলেও আরিফ জয় করতে পারেননি তার নিজ দপ্তরের অনেকের মন।
গত বুধবার রাতে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে কাউন্সিলরদের গোপন বৈঠক তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
গত বুধবার রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত টানা একঘণ্টার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় গত ১০ জুন সিসিকের সাধারণ সভায় প্যানেল মেয়র-১ ও কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েছ লোদীর উপর যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল সেটা রেজ্যুলেশন থেকে বাদ দেয়ার জন্য ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।
রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ছাড়াও শান্তনু দত্ত সন্তু, মখলিছুর রহমান কামরান, আজাদুর রহমান আজাদ, রকিবুল ইসলাম ঝলক, সিকন্দর আলী, আবজাদ হোসেন আমজাদ, তৌফিক বকস লিপন, মোস্তাক আহমদ, ইলিয়াছুর রহমান, সাইফুল আলম বাকের, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহানার খানম মিলন ও শামীমা স্বাধীন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন আরিফুল হককে মিথ্যা অভিযোগে শুধুমাত্র তার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে থামিয়ে দেয়ার জন্য কিবরিয়া হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। নগরীর আমজনতাও এটা বুঝেন যে আওয়ামীলীগের কুট কৌশলে ধরাসাই হয়েছেন মেয়র আরিফ।
তবে নগরবাসী মনে করেন সিটি মেয়রের পদই আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য কাল হয়েছে। বিচক্ষণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে টক্কর দেয়ার অপরাধে তার আজকের এই নাজেলাহাল অবস্থা। তাই বেকায়দায় শুধু মেয়র আরিফই নন। বেকায়দায় নগরবাসীও।উল্লেখ্য , গত ১৫ জুন ২০১৩ সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের মেয়র পদে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। এছাড়া এ নির্বাচনের অপর মেয়র প্রার্থী সালাহউদ্দিন রিমন ‘তালা’ প্রতীকে ১ হাজার ২২ ভোট পেয়েছেন।