প্রবাস

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশী ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তানভিরুল আরেফীন  (অমি) নামের এক বাংলাদেশী ছাত্র মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। সে সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলো। ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাস সংলগ্ন তার ভাড়া বাসায় সে গত ২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে। ঢাকায় জন্ম নেয়া এবং বড় হওয়া অমি’র বাপ-দাতার বাড়ী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাদিনগর। তার বাবার নাম মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ আর মাতার নাম নাসরিন আকতার। অমি’র স্বপ্ন ছিলো সে বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। এদিকে পারিবারিক সিদ্ধান্তে অমি’র মরদেহ গত ৯ জুলাই সোমবার দুপুরে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। খবর ইউএনএ’র।
জানা গেছে, অমি’র জন্ম ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। সেই হিসেবে অমি’র বয়স ২২ বছর। সুঠাম দেহেরে টঘবগে যুবক। যার চোখে-মুখে বড় কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু না, তার কোন স্বপ্নই পুরণ হলো না। সেই সাথে বাবা-মা’র স্বপ্নও পূরণ হলো না। অথচ অপরিণত বয়সে তাকে চলে যেতে হলো। তাও আবার  না ফেরার দেশে, কাউকে না বলে, কিছু না বলে। এ এক মর্মান্তিক বিদায় অমি’র।
তানভিরুল আরেফীন অমি’র স্বপ্ন ছিলো সে বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবে। সন্তানের স্বপ্নও বাবা-মায়ের স্বপ্ন হয়ে উঠে। তাদের পরিবারে অমি ছাড়াও তার দু’টি ছোট বোন রয়েছে। সেই লক্ষ্যে এগিয়েও যাচ্ছিল। ঢাকার উত্তরা মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে ভর্তি হয় নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি-তে গোলেন্ডন জিপিএ ফাইভ পেয়ে স্বপ্ন পুরণের প্রত্যাশায় ভর্তির চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীব বিজ্ঞানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তার মন খারাপ হয়ে যায়। সে ঢাকা ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারী স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্র এসে সাউথ ফেøারিডা ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়। সন্তানের স্বপ্ন পূরনের জন্য বাবা-মা জায়গা-জমি বিক্রি করে অর্থ যোগ দিতে থাকেন। অমিও নানা কষ্ট শিকার করে এগুতে থাকে। সে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের পাশেই ভাড়া বাসায় বসবাস করেতো। এবছর তার তৃতীয় বর্ষ চলছিলো। স্বপ্ন পুরণ হওয়ার আর মাত্র কিছু দিন। কিন্তু না হঠাত করেই সবার সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো। কোন খোঁজ খবর নেই।
নিউইয়র্কের রিচমন্ড হীলের বসবাসকারী অমি’র আপন চাচা জহিরুল ইসলাম বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধি-কে জানান, অমি শান্ত-শিষ্ট ছেরে ছিলো। পড়াশুনা ছাড়া কিছুই বুঝতো না। বই আর কম্পিউটার নিয়ে বসলে অনেক সময় খাওয়ার কথাও ভুলে যেতো। গত ১৬ জুন চাচা-ভাতিজার মধ্যে ফোনে সর্বশেষ কথা হয়। এরপর ৩/৪দিন কোন কথা হয়নি। কেউ কাউকে ফোনও দেয়নি। চাচা ভেবেছেন অমি হয়তো পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত, তাই কল দিচ্ছে না। কিন্তু গত সপ্তাহে সপ্তাহে তার খোঁজ নিতে গিয়ে কোন খববও পাওয়া যায়নি। ফোনও পিকআপ করছে না। চাচা সহ পরিবারের লোকজনের বুক কেঁপে উঠে। নিউইয়র্ক থেকেন অমি’র এক বন্ধুর কাছে ফোন করে তার খোঁজ-খবর নিতে বলায় বেরিয়ে আসে আসল খবর। অমির বন্ধুরাও জানতো না তার করুণ মৃত্যুর কথা।
অমি’র চাচা জহিরুল ইসলাম জানান, অমির খোঁজ নিতে বলায় তার এক বন্ধু অমি’র বাসায় গিয়ে দেখতে পায় তার (অমি) ঘরের ভিতর আলো জ্বরছে, কিন্তু দরজা বন্ধ। অমি চারতলা বাসার চতুর্থ তলায় একা থাকতো। পরবর্তীতে ডাকাডাকি করে অমির কোন খোজ না পাওয়ায় পুলিশ কল কররৈ পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে অমি’র মরদেহ উদ্ধার করে। দেখা যায় অমির মরদেহ গোসল খানার বাসটবে পড়ে রয়েছে আর ঝর্না দিয়ে পানি পড়ছে। প্রথমিকভাবে পুলিশের ধারণা গোসল করার সময় অমি হার্ট অ্যাট্যাক করে কয়েকদিন আগেই মারা গেছে।  ইতিমধ্যেই তার দেহও বিকৃত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয় এবং প্রাথমিক ময়না তদন্তে অমি’র স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।  
অমি’র মৃত্যুে খবর পেয়ে তার চাচা-চাচি ও স্বজনরা ফ্লোরিডা ছুটে যান এবং সেখানে ২/৩দিন অবস্থান করে অমির মরদেহ গত ৬ জুলাই শুক্রবার রাতের ফ্লাইটে নিউইয়র্ক নিয়ে আসেন এর অমি’র মরদেহ নিউইয়র্কের রিজউডস্থ পাক ফিউরেনাল হোমে রাখা হয়। পরবর্তীতে ৮ জুলাই রোববার বাদ মাগরিব পাক ফিউরেনাল হোম মসজিদে অমি’র নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ৯ জুলাই সোমবার দুপুরে অমি’র মরদেহ লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবর স্থানে দাফন করা হয়। এব্যাপরে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র কর্মকর্তা বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এছাড়াও অনেক প্রবাসী প্রবাসী এগিয়ে আসেন।
এদিকে অমি’র মা গুরুতর অসুস্থ্য থাকায় তার বাবা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ভারতে (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) রয়েছেন। অমি’র আকাল মৃত্যুর খবরে দেশ ও প্রবাসের স্বনজদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


এলএবাংলাটাইমস/এএল/এলআরটি